অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমরা হব রোল মডেল

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য
ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য
১৯৯১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। মুঠোফোনের মাধ্যমে ভর্তি-প্রক্রিয়া শুরু করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক চালু, প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন তৈরি, প্রযুক্তিতে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রতিযোগিতা এসিএম-আইসিপিসির বিশ্ব আসরে (ওয়ার্ল্ড ফাইনাল) টানা সাতবার অংশগ্রহণ, অতি সম্প্রতি নাসা স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিশ্বসেরা হওয়াসহ তথ্যপ্রযুক্তির চাকরির বাজারে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকেরা। জোরদার হয়েছে গবেষণা কার্যক্রমও। ২০০৯ সালের আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভর্তি ফরম সংগ্রহ করতেন। পূরণ করে তা আবার জমা দিতেও লাইনে দাঁড়াতে হতো। প্রয়োজনীয় কোনো কাগজ না নিয়ে এলে ভোগান্তি বাড়ত আরও। ওই বছর এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রথম মুঠোফোনে ভর্তি-প্রক্রিয়া শুরু করে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘব করেছে। পরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। বর্তমানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডিতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা ও গবেষণা করছেন। মুখোমুখি: ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপাচার্য

প্রথম আলো: উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের দেড় বছর পূর্ণ হয়েছে। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কী কী উদ্যোগ নিয়েছেন?

উপাচার্য: দুঃখজনক হলেও সত্য, আমি আসার পর দেখলাম সেশনজট, ফলাফলজট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আমি সবার সঙ্গে কথা বলে, উদ্যোগ নিয়ে এই অভিশাপ থেকে শিক্ষার্থীদের প্রায় মুক্ত করে ফেলেছি। এখন ক্লাস শুরু, শেষ ও ফল প্রকাশের তারিখ নির্দিষ্ট করে তা কঠোরভাবে মানা হচ্ছে, নজরদারি করা হচ্ছে। ঝরে পড়ার সংস্কৃতি থেকে শিক্ষার্থীদের মুক্ত করার চেষ্টায় সফল হয়েছি। র‍্যাগিং, মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদ, যৌন হয়রানির মতো বিষয়ে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়কে শতভাগ আর্থিক শৃঙ্খলায় এনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে গত দেড় বছরে কোনো অডিট আপত্তি নেই। গত দেড় বছরে এক দিনের জন্যও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়নি। পরিবহনসংকট সমাধানে নতুন ছয়টি বাস কিনেছি। আগামী মাসে আরও দুটি আসবে। আগামী অর্থবছরে আরও ছয়টি আসবে। ডিজিটাল ই-বুকে চার গুণ বরাদ্দ বাড়িয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে স্বাস্থ্যবিমার অধীনে নিয়ে আসতে শুরু করেছি। বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত মাস্টাররোলের কোনো কর্মী নিয়োগ হয়নি। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় উৎসাহিত করতে ডিনস অ্যাওয়ার্ড চালু করেছি। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিভাগে বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টা নিয়োগ দিয়েছি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য দেয়াল নির্মাণ শুরু করেছি। পুরো ক্যাম্পাস রাতে লাইটিংয়ের আওতায় নিয়ে এসেছি, সিসি ক্যামেরা দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। প্রযুক্তির সহায়তায় চেহারা শনাক্তকরণ মুঠোফোন অ্যাপসের মাধ্যমে উপস্থিতির তথ্য রাখার সুবিধা শিগগিরই চালু হবে। অফিসে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল হাজিরা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রথম আলো: শিক্ষা ও গবেষণার মান উন্নয়নে কী কী পদক্ষেপ আপনার?
উপাচার্য: আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর গবেষণা বরাদ্দ তিন গুণ করেছি। চলতি বছরে তা ছয় গুণে উন্নীত হবে। শিক্ষার মানোন্নয়নে দেড় শতাধিক কর্মশালা করেছি। আমাদের শিক্ষকদের গবেষণা প্রবন্ধ গুরুত্বপূর্ণ জার্নালে প্রকাশিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের সঙ্গে গবেষণায় যুক্ত হচ্ছে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষণার জন্য অর্থ বরাদ্দ নিয়ে আসছি। গবেষণার জন্য উন্নত মানের ল্যাব তৈরি ও বিদ্যমান ল্যাবগুলোর উন্নয়নে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছি।
প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ আছে কি?
উপাচার্য: ২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে। ১ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রাক্‌-একনেক পর্যায়ে আছে। এটি পাস হলে ছাত্র ও ছাত্রীদের দুটি করে নতুন চারটি আবাসিক হল, চারটি নতুন একাডেমিক ভবন, কর্মচারীদের একটি, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য চারটি আবাসিক ভবন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটিসহ মোট ১৭টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ সম্ভব হবে। তখন আবাসনসংকট আর থাকবে না।
প্রথম আলো: এই বিশ্ববিদ্যালয়কে আপনি আপনার মেয়াদকালের মধ্যে কী রকম দেখতে চান?
উপাচার্য: শুধু দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নয়, শিক্ষা-গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে রোল মডেল হিসেবে দেখতে চাই। বাংলাদেশের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আমরা হব রোল মডেল। এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে সুশাসনের কেন্দ্রবিন্দু।
প্রথম আলো: শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রতি আপনার বিশেষ কোনো বার্তা আছে কি?
উপাচার্য: অভিভাবকদের উদ্দেশে আমার একটাই কথা, তাঁরা যেন সব সময় আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। আর শিক্ষার্থীদের বলছি, বৈধ শিক্ষার্থীদের জন্য সবকিছু উন্মুক্ত। যেকোনো বিষয়ে সরাসরি আমার সঙ্গে কথা বলতে পারবে। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যৌথভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চাই।