শিক্ষক নিয়োগে অভিজ্ঞতা মেধাকে প্রাধান্য দিই

আতফুল হাই শিবলী, উপাচার্য
আতফুল হাই শিবলী, উপাচার্য
নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু ২০১২ সালে। সিলেট নগরের তেলিহাওর এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্থায়ী ঠিকানা। নিজস্ব ক্যাম্পাস গোলাপগঞ্জের হেতিমগঞ্জে। প্রাতিষ্ঠানিক কিছু জটিলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ এখন আটকে রয়েছে। এরপরও ২০২০ সাল নাগাদ স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার সম্ভাবনা দেখছেন কর্তৃপক্ষ। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ চৌধুরী। প্রতিটি বিভাগের পাঠদানের জন্য রয়েছেন স্থায়ী ও খণ্ডকালীন বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি গবেষণাকর্মেও বিশেষ নজর দেওয়া হয়। রয়েছে সমৃদ্ধ পাঠাগার। দেশে-বিদেশের বিভিন্ন গবেষণাকর্মে শিক্ষার্থীরা সুনাম কুড়িয়েছেন। শিক্ষকেরাও আন্তর্জাতিক গবেষণাকাজে স্বীকৃতিও পেয়েছেন। সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্যও সুনাম কুড়িয়েছে। বিতর্কসহ সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড তথা সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ১২টি সংগঠন রয়েছে। শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে তিন হাজার প্রায়। মুখোমুখি: আতফুল হাই শিবলী, উপাচার্য

প্রথম আলো: সিলেটের অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটির ভিন্নতা কী?

উপাচার্য: বিশ্ববিদ্যালয় একটি উদার ক্ষেত্র। আমি সব সময়ই বলি, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে মুক্তচিন্তার স্থান; যা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে বিরাট ব্যাপার। নর্থ ইস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশে কোনো ধরনের কুসংস্কার ও সংকীর্ণতার স্থান নেই। কেউ এখানে নিজের আদর্শ স্থাপন করতে পারবে না। এমন কিছু কেউ করতে চাইলে গোলকধাঁধার মধ্যে পড়ে যাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সম্পর্ক অত্যন্ত আন্তরিক। শিক্ষকেরা সহজেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যেতে পারেন। এটিকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি দিক বলা যায়। শিক্ষক নিয়োগে আমরা অভিজ্ঞ ও মেধাবী শিক্ষকদের প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আমি নিজে প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ পরিদর্শন করি ও নির্দেশনা দিয়ে থাকি। শিক্ষার্থীরা নিজেদের প্রয়োজনে বা কোনো সমস্যা হলে সরাসরি আমার সঙ্গে দেখা করতে পারে। আমরা আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান, মেধাবী শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ণ বিনা বেতন অথবা অনেক কম অর্থে উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিচ্ছি।
প্রথম আলো: শিক্ষার পাশাপাশি কোন দিকগুলো গুরুত্ব দিচ্ছেন?
উপাচার্য: শ্রেণিকক্ষের শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহিত করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার, যেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেদের সমৃদ্ধ করতে পারছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চা এবং সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের জন্যও সুনাম কুড়িয়েছে। সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য ১২টি সংগঠন রয়েছে। সংগঠনগুলো তাদের কার্যক্রমে দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়িয়েছে। সিলেটের অনেক গুণী মনীষী ছিলেন, তাঁদের নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা গুণীদের নিয়ে গবেষণা করতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিয়ে থাকি।
প্রথম আলো: বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসে ফেরার উদ্যোগ কী অবস্থায় আছে?
উপাচার্য: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালায় পাঁচ-সাত বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করার কথা বলা আছে। আমি প্রায় দুই বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে রয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ক্যাম্পাসের নামফলক উদ্বোধনও হয়েছে। তবে বর্তমানে নির্মাণকাজে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় সাময়িক বন্ধ রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ২০২০ সালের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হয়ে যাবে। সেটি হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু হবে। শহর থেকে সড়কপথের যানজট এড়িয়ে নদীপথে ক্যাম্পাসে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করা হবে। যার ফলে নৌপথে শিক্ষার্থীরা মনোরম পরিবেশ উপভোগের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে পারবে।
প্রথম আলো: আপনার নেতৃত্বে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে কীভাবে দেখতে চান?
উপাচার্য: বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান সংকুলানের জন্য বিভিন্ন কোর্স চালু করার ইচ্ছে থাকলেও সম্ভব হয়ে উঠছে না। ভবিষ্যতে স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর হলে নতুন নতুন কোর্স চালু করার ইচ্ছে রয়েছে। যে বিষয়গুলো দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই, কিন্তু বহির্বিশ্বে এর গুরুত্ব রয়েছে, সেগুলো স্থান পাবে। এর মধ্যে অ্যাপ্লাইড বিহেভিয়ার অ্যানালাইসিস বিষয়টি শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। উচ্চশিক্ষাকে অর্থের মাপকাঠিতে তুলনা করা যায় না। আমরা শিক্ষাকে গুরুত্ব দিতে চাই। আগে উচ্চশিক্ষার জন্য সিলেটের মানুষের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা ছিল কিন্তু এখন দেশের মধ্যে উচ্চশিক্ষার সুযোগ তৈরি হওয়ায় সে প্রবণতা কমেছে। আমরা দেশের মধ্যে আরও বেশি মানসম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।