কী কী যোগ্যতা থাকলে বৃত্তি পাওয়া সহজ

ছবি: রয়টার্স
ছবি: রয়টার্স

উচ্চমাধ্যমিক পেরিয়ে কিংবা স্নাতক শেষে অনেক শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষার জন্য ভিনদেশে যেতে চান। বৃত্তির জন্য আবেদন করেন। আগে থেকেই প্রস্তুতি নিলে কিন্তু বৃত্তি পাওয়া সহজ হয়। কী কী যোগ্যতা থাকলে বৃত্তি পাওয়ার দিক থেকে আপনি এগিয়ে থাকবেন?

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে

কেউ যদি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে ইউরোপ বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়তে চান তাহলে উচ্চমাধ্যমিক পড়ার সময় থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:

এসএটি স্কোর: স্নাতক পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পড়তে গেলে এসএটি স্কোরকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশভেদে ভিন্ন স্কোর গ্রহণ করা হয়। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ‘অ্যাপ্লাই’ লিংক থেকে যোগ্যতার মাপকাঠি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।

সামাজিক কার্যক্রম: ভর্তির আবেদনের বিভিন্ন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সামাজিক দক্ষতা ও নেতৃত্ব বিকাশের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ জন্য দেশে স্কুল ও কলেজে পড়ার সময়ে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনে যুক্ত হওয়া যায়। গণিত অলিম্পিয়াড, পদার্থবিজ্ঞান অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন মেধাবৃত্তিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা ভর্তি কার্যক্রমে দারুণ সহায়তা করে। স্কাউটিং, সামাজিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের সনদও এসব ক্ষেত্রে আপনাকে এগিয়ে রাখবে।

সুপারিশপত্র: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের ক্ষেত্রে সুপারিশপত্র (রিকমেন্ডেশন লেটার) জমা দিতে হয়। আলোচিত কোনো ব্যক্তিত্ব, স্কুল বা কলেজের শিক্ষক, প্রভাবশালী কোনো ব্যক্তিত্ব যিনি শিক্ষার্থীকে চেনেন, তাঁর কাছ থেকে সুপারিশপত্র নিয়ে জমা দিতে হয়। যিনি সুপারিশপত্র লিখবেন তিনি শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তিক দক্ষতার পাশাপাশি জ্ঞান অন্বেষণের আগ্রহসহ সামাজিক দক্ষতা ও নেতৃত্বের প্রকৃতি সম্পর্কে উল্লেখ করবেন।

ভাষাদক্ষতার প্রমাণ: সাধারণভাবে যেকোনো দেশেই ইংরেজি ভাষার কোনো বিষয়ে পড়তে গেলে আইইএলটিএস ও টোয়েফল স্কোরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীর ভাষাভিত্তিক দক্ষতা প্রমাণের জন্য এসব সনদ গ্রহণ করা হয়।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য: কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কেন পড়াশোনা করতে চায়, পড়াশোনার মূল লক্ষ্য কী, ভবিষ্যতে কোন বিষয়ে কাজ করতে চায়—এসব নানা বিষয়ে জানার জন্য আবেদনের সঙ্গে আগ্রহের কথা লিখতে হয়। অন্য কারও আবেদনপত্র থেকে হুবহু অনুকরণ করে অনেকেই নিজের কথা লিখে জমা দেয়, যেটি কোনোভাবেই করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহের কথা বুঝে ব্যাখ্যা করে লিখতে হবে, অনুকরণ করা যাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষে

স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকেই খোঁজখবর রাখতে হবে। যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে:

গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশ: পৃথিবীর যেকোনো দেশেই স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থীর গবেষণা ও নিবন্ধের দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে বিষয়ে পড়ছেন বা গবেষণা করছেন তার ওপর নিবন্ধ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের চেষ্টার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনেকেই নিচু মানের জার্নালে নিবন্ধ প্রকাশের চেষ্টা করেন, যা কখনোই করবেন না। এতে ভবিষ্যতে বিপদে পড়বেন, ভর্তি বাতিল হয়ে যেতে পারে। গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা প্রাক্তনীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সহায়তা নিন। বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা, পোস্টার উপস্থাপনের অভিজ্ঞতা ভর্তির কার্যক্রমে ইতিবাচক হিসেবে কাজ করে।

ইন্টার্নশিপ বা চাকরির অভিজ্ঞতা: উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়ে পড়তে যেতে চান, সেই ক্ষেত্রে ইন্টার্নশিপ বা চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে তা ভর্তি ও বৃত্তি পেতে বেশ কার্যকর। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষ থেকেই নিজের ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ খুঁজে বের করুন।

অধ্যাপক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ: সাধারণভাবে স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিভাগের ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের অধ্যাপক ও শিক্ষকদের সঙ্গে আগে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৃত্তি বা ফান্ডের জন্য আবেদন করা যায়। প্রতিবছর বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি ও ফেলোশিপের জন্য অর্থ গ্রহণ করেন শিক্ষকেরা। আগে থেকে যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সেই অধ্যাপকের মাধ্যমে বৃত্তি পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়ে পড়ছেন, কেন সেই বিষয়ে ভবিষ্যতে পড়বেন, যে অধ্যাপক বা শিক্ষককের অধীনে গবেষণা করতে চান, তা বিস্তারিত ই–মেইলে জানাতে হবে।

সুপারিশপত্র: স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কিংবা যার অধীনে গবেষণা করছেন তাঁর কাছ থেকে সুপারিশপত্র জমা দিতে হবে। সুপারিশকারী যেখানে আবেদন করছেন, সেই কর্তৃপক্ষ বরাবর আপনাকে চেনেন, জানেন, আপনার মেধা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে ধারণা আছে, এমনটা লিখলে আপনি এগিয়ে থাকবেন।

গবেষণা প্রস্তাব: দেশভেদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টেটমেন্ট অব পারপাজ বা কেন পড়বেন, কোন বিষয়ে গবেষণা করতে চান সে সম্পর্কে লিখে জমা দিতে হয়। অন্যের প্রস্তাব কখনোই অনুকরণ করে জমা দেবেন না। নিজের আগ্রহ, লক্ষ্য ও উদ্ভাবনী ধারণা নিয়ে প্রস্তাব লিখুন।

ভাষাদক্ষতা প্রমাণ: আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর বিভিন্ন দেশে ইংরেজি ভাষায় পড়ানো হয় এমন মাস্টার্স কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের জন্য বাধ্যতামূলক।

জিআরই, জিম্যাট স্কোর: যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় স্নাতকোত্তর কিংবা পিএইচডি পর্যায়ে আবেদনের জন্য জিআরই স্কোর বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এমবিএ বা ব্যবসায় অনুষদের কোনো বিষয়ে পড়তে গেলে জিম্যাট স্কোরকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। অনেক বিজনেস স্কুল এখন জিম্যাটের পাশাপাশি জিআরই স্কোর গ্রহণ করে থাকে। স্কোরভেদে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে হয়।

 আরও যা খেয়াল রাখতে হবে

নম্বরপত্র জমা: ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ক্ষেত্রে নম্বরপত্রের কপি (ট্রান্সক্রিপ্ট) জমা দিতে হয়, যা অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় লেখা হতে হবে কিংবা ইংরেজিতে ভাষান্তর করে জমা দিতে হবে। কুরিয়ার করে পাঠাতে হতে পারে, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ই–মেইলে বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আবেদনপত্র জমা দিতে হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নম্বরপত্র তৃতীয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে যাচাই করিয়ে নিতে হয়।

সময়ক্রম ধরে আবেদন করা: বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সেশনে আবেদন করা যায়। এ ক্ষেত্রে ‘ফল সেমিস্টার’ (আগস্ট থেকে), ‘স্প্রিং সেমিস্টার’ (জানুয়ারি থেকে) ও ‘সামার সেমিস্টার’ (মে থেকে) বিভিন্ন ভাগে আবেদন করা যায়। প্রধানত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ফল সেমিস্টারে আবেদন করতে হয়।

ওয়েবসাইটে নজর রাখা: যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তার ওয়েবসাইট, ফেসবুক বা ইউটিউব থেকে নানা তথ্য জানা যায়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য অনলাইনে বিভিন্ন সেশনও পরিচালনা করে, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।