অক্সফোর্ড ও এমআইটিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী

আফরিন সুলতানা চৌধুরী ও ওমর ফারুক শিকদার
আফরিন সুলতানা চৌধুরী ও ওমর ফারুক শিকদার

গবেষণায় এগিয়েছেন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা। ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে গবেষণা কিংবা উচ্চশিক্ষা অনেকটা হাতের নাগালে 

এখন। এক ক্লিকেই জেনে নেওয়া যায় কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ঘটছে। জেনে নেওয়া যায় বিশ্বসেরা গবেষণাগার আর আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে (এমআইটি) গবেষণা বৃত্তি পেয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই প্রাক্তন শিক্ষার্থী।

দুজনই পড়েছেন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগে। বলছিলাম আফরিন সুলতানা চৌধুরী ও ওমর ফারুক শিকদারের কথা। আফরিন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার উইলিয়ামডান স্কুল অব প্যাথলজিতে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিক ওমর এমআইটিতে জিনোম এডিটিং টেকনোলজি নিয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা পৌঁছে গেছেন স্বপ্নের ক্যাম্পাসে। মেসেঞ্জারে কথা হলো তাঁদের দুজনের সঙ্গে।

কীভাবে অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ পেলেন—এই প্রশ্নের জবাবে আফরিন বলেন, ‘অক্সফোর্ড বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। যখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শব্দটার অর্থ বুঝতে শিখেছি, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখেছি অক্সফোর্ডে পড়ার। সেই স্বপ্ন পূরণ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের স্কলারশিপ ইরাসমাস মুন্ডাসের কল্যাণে। অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দিনগুলোতে ইন্টারনেটে দেখতাম কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা কেমন। কীভাবে যাওয়া যাবে ওসব বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন লেখা পড়তাম। আর বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করতাম সেসব লেখার সারসংক্ষেপ।’

এই বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়ার আগে অবশ্য জার্মানির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান আফরিন। ২০১৭ সালে জার্মানির হাইডেলবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তরের সুযোগ পান তিনি। পাশাপাশি জার্মানির সবচেয়ে বড় ক্যানসার গবেষণাকেন্দ্রে কাজ করারও সুযোগ হয়েছিল তাঁর। পরে সুইডেনের কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে ইন্টার্নশিপ করেন আফরিন।

আফরিন বলেন, ‘অনেকেই হয়তো জানেন না মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার কে পাবেন, সেটা নির্বাচন করা হয় এই কারোলিন্সকা ইনস্টিটিউট থেকে। কারোলিন্সকায় কাটানো সময়গুলো থেকেই ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ভূমিকা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহ জন্মায়। সেই আগ্রহ থেকেই আমি অক্সফোর্ডে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের গবেষণা করার জন্য অধ্যাপকদের ই-মেইল করি। অধ্যাপকেরা সিভি ও মোটিভেশন লেটার দেখে আগ্রহী হয়ে স্কাইপে সাক্ষাৎকার নেন। ব্যস, সুযোগ
পেয়ে যাই।’

এবার আসা যাক ওমর ফারুকের কাছে। শিক্ষাজীবনে তাঁর অর্জন নেহাত কম নয়। স্নাতকোত্তর শেষ করার পর তিনি আইইএলটিএস ও জিআরই পরীক্ষা দেন। ভালো ফলাফলও অর্জন করেন। স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্কলারশিপ পান, যদিও তিনি সিদ্ধান্ত নেন টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সে পিএইচডি করার। এ ছাড়া শিক্ষাজীবনেও এটুকু সময়েই অর্জন করেন প্রেসিডেন্ট সিলেক্ট অ্যাওয়ার্ড, দ্য এনডয়েড ফোনাথন স্কলারশিপসহ আরও বেশ কয়েকটি পুরস্কার।

কথায় কথায় জানতে চাওয়া হলো এমআইটি নিয়ে। তিনি বলেন, সবকিছুর মধ্যে এমআইটি তাঁর কাছে অন্য রকম পাওয়া। সুবিশাল ক্যাম্পাস। গবেষণাগারে উন্নত ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সব মিলিয়ে কাজ করার শ্রেষ্ঠ স্থান।

এমআইটিতে তিনি জিনোম এডিটিং টেকনোলজি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। জীবকোষের ডিএনএতে অবস্থিত জিনকে পরিমার্জনের পদ্ধতি নিয়ে খ্যাতনামা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করছেন। তবে দুজনই স্বপ্ন দেখেন দেশের পাশাপাশি পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার।

দুজনের কাছেই জানতে চাইলাম অবসরকালীন কর্মকাণ্ড নিয়ে। আফরিন জানালেন, ছোটবেলা থেকেই বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বইপড়া কর্মসূচির সদস্য তিনি। ছায়ানটের গানের ক্লাস কিংবা শিশু একাডেমীর ছবি আঁকার ক্লাস—সবকিছুতেই ছিল তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ।

অন্যদিকে ওমর ফারুকের ছেলেবেলা কেটেছে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে। রাতের বেলা খোলা আকাশের নিচে পাটি বিছিয়ে তারা গুনতেন আর ভাবতেন, একদিন তিনিও আকাশে উড়বেন। তাঁর সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এখনো তাঁর চোখে অনেক স্বপ্ন। এই স্বপ্নই তাঁকে জাগিয়ে রাখে, কাজ করার অনুপ্রেরণা জোগায়।

আফরিন ও ওমর মনে করেন এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিটি দিন নতুন কিছুর শেখার সুযোগ করে দেয়। তাঁরা স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দেশে বসেই উন্নত মানের গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। তবে অবশ্যই ইন্টারনেটের সঠিক ব্যবহার জানতে হবে বলে মত তাঁদের।