চুপচাপ ছেলেটা যেভাবে বদলে গেল

রাজীব বৈষ্ণব। ছবি: ফারজানা আনু
রাজীব বৈষ্ণব। ছবি: ফারজানা আনু

রাজীব বৈষ্ণব সিলেটের এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজে ইন্টার্নি করছেন। তাঁর এক বন্ধুর দাবি, রাজীবকে নাকি পুরো সিলেটবাসী চেনে! দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাই প্রথমেই এই বক্তব্যের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাইলাম। হেসে বললেন, ‘না না, অনেকে চেনে। সবাই না। শিক্ষকেরা ভালো ছাত্র হিসেবে চেনেন। আমার গান, অভিনয়, ছবি আঁকা বা সংগঠনের মাধ্যমেও অনেকের কাছে একটা পরিচিতি তৈরি হয়েছে।’ পড়ালেখা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে বন্ধুদের মধ্যে ‘দুঃসময়ের সাথি’ হিসেবে রাজীব সবচেয়ে বেশি পরিচিত। একবার হলো কি, চট্টগ্রাম থেকে মেডিকেল কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ছুটি শেষে হলে ফিরবেন। যথারীতি ট্রেন লেট। সেই শিক্ষার্থীরা সিলেট রেলস্টেশনে পৌঁছালেন রাত একটায়। ফোন দিলেন বিপদের বন্ধু রাজীবকে। রাজীব আরও কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন স্টেশনে। অটোরিকশা ঠিক করে দিয়ে সাইকেলে চড়ে তাঁদের পাশে থাকলেন রাজীব ও তাঁর বন্ধুরা। ক্যাম্পাসে যখন ফিরেছেন, রাত তখন আড়াইটা।

রাজীব প্রতি মাসে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য নিজের পকেট থেকে খরচ দেন। সারা বাংলাদেশের চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সিলেট অঞ্চলের দুজন প্রতিনিধির একজন রাজীব। যে ছেলে মেডিকেল কলেজে উঠে এত কিছুর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, স্কুল-কলেজে কিন্তু এসব ভাবতেও পারেননি। ঢাকার নটর ডেমে পড়ার সময়ও নাকি বাসা আর কলেজ ছাড়া কিছু চিনতেন না। তা নিয়ে বন্ধুদের টিপ্পনীও কম শুনতে হয়নি।

সেই চুপচাপ শান্ত ছেলেটি এখন তাঁর কলেজের ডিবেটিং ক্লাব, মেডিসিন ক্লাব এবং প্রতিবেশী নাট্যগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। মেডিকেল কলেজে এসেই তিনি আবিষ্কার করেছেন, শুধু হৃৎপিণ্ড বা মানব অস্থিই নয়, মানুষ বা প্রকৃতির ছবিও তিনি ভালোই আঁকেন। বন্ধুরা মুখচ্ছবি আঁকিয়ে নেওয়ার জন্য এখন হাজির হন রাজীবের দরজায়।

প্রথম বর্ষের সরস্বতী পূজায় তাঁকে জোর করে নাটকের দলে ঢুকিয়ে দেওয়া হলো। তবে রাত একটা-দুইটা পর্যন্ত মহড়ায় মন ছিল না। পালিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে চুপচাপ পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় বর্ষে যখন তাঁকে নাটকে পেয়ে বসল, তখন খুব আফসোস করেছিলেন প্রথম বর্ষের মহড়ার রাতগুলোর জন্য। দ্বিতীয় বর্ষে তিনি রামায়ণ নাটকে রাম সাজেন। তৃতীয় বর্ষে গীতিনাট্য বাল্মীকি প্রতিভাতে বাল্মীকির কণ্ঠ দেন। এই নাটক দিয়েই তিনি ক্যাম্পাসের সবার হৃদয়ে স্থান করে নেন। এরপর দক্ষযজ্ঞতে শিবের ‘পাট’ করেন। করেছেন প্রতিবেশী নাট্যগোষ্ঠীর শৃঙ্খলও। এখানে আবার চিকিৎসক রাজীব চরিত্রের জন্য লেখক হয়ে মারাও যান!

শুধু নাটক করেই ক্ষান্ত হননি। পূজা উপলক্ষে সূর্যপুত্র কর্ণ নামে একটি নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন। ভবিষ্যতে নাটককে জীবনের সঙ্গে নিয়েই নিউরোসার্জন হিসেবে দেশের মানুষের সেবা করতে চান এই মেধাবী প্রিয়মুখ।