সর্বেসর্বা

সাদিয়া সুলতানা । ছবি: মৌমিতা ইসলাম
সাদিয়া সুলতানা । ছবি: মৌমিতা ইসলাম

সাদিয়া সুলতানা পড়ছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে চতুর্থ বর্ষে। ক্যাম্পাসের কম–বেশি সবাই তাঁকে চেনেন ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’, অর্থাৎ অনুপ্রেরণাদায়ী বক্তা হিসেবে! তাঁর ক্যাম্পাসের এক জুনিয়র মেসেঞ্জারে জানালেন, কাউকে প্রেরণা দেওয়ার কাজটা ‘সাদিয়া আপু’ নাকি বেশ ভালো পারেন।

কী ভালো লাগে সাদিয়ার? ফোনের ওপাশ থেকে উত্তর আসে, ‘অনেক কিছু। লেখালিখি, বিতর্ক, রান্না, সেলাই, খেলাধুলা, উপস্থাপনা...।’ বুঝলাম, ভুল করেছি। প্রশ্ন হওয়া উচিত ছিল, কী ভালো লাগে না! সহশিক্ষা কার্যক্রমে যে তিনি বেশ এগিয়ে আছেন, সেটা আমাদের ততক্ষণে বোঝা হয়ে গেছে। আর পড়ালেখা? জানা গেল, এত সবের পাশাপাশি পড়ালেখাতেও তিনি ভালো সিজিপিএ ধরে রেখেছেন।

প্রতি পয়লা বৈশাখে সাদিয়া ক্যাম্পাসে পিঠার দোকান দেন। বন্ধুরা সাহায্যও করেন। সেই সব পিঠা আবার তাঁর নিজের তৈরি। পিঠা বিক্রির টাকা জমিয়ে কিনে ফেলেছেন একটা সেলাই মেশিন। হোস্টেলে বন্ধুবান্ধব, সিনিয়র, জুনিয়র সবার পছন্দের ডিজাইনে জামা বানিয়ে দেন। সম্প্রতি ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় রংপুর মেডিকেলকে হারিয়ে তাঁর দল চ্যাম্পিয়ন হয় আর তিনি পান শ্রেষ্ঠ বক্তার খেতাব। বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন কর্তৃক আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সেরা ১৮টি দলের একটি তাঁর দল।

 ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’, সূত্র মেনে খেলাধুলায়ও কম যান না এই বিতার্কিক। সর্বশেষ ২৬ মার্চ আয়োজিত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ইনডোরে ক্যারমের এই চ্যাম্পিয়ন আউটডোরে হাইজাম্প ও লংজাম্প—দুটিতেই দ্বিতীয় হন। তা ছাড়া আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা বা অবিরাম গল্প বলা বিভাগে অসংখ্য পুরস্কার আছে তাঁর। এ ছাড়া ‘খাইদাই পার্টি’ নামে বন্ধুরা মিলে একটি দল করেছেন, যেখানে তাঁরা বিভিন্ন খাবারের প্রচার করেন এবং অর্ডার করা খাবার সরবরাহের কাজ করেন।

সর্বশেষ জন্মদিনে এক জুনিয়র হঠাৎ ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে আসতে বলেন। হোস্টেল থেকে ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখেন, ডিপার্টমেন্টের জুনিয়ররা মিলে ‘সারপ্রাইজ বার্থডে পার্টি’র আয়োজন করেছেন। সাদিয়াকে ঘিরে এ রকম অসংখ্য ভালোবাসার গল্প ছড়িয়ে আছে ক্যাম্পাসের আনাচকানাচে। গল্পের কথা বলতেই মনে পড়ল, সাদিয়া কিন্তু গল্পও লেখেন। তাঁর লেখা পাঁচটি ছোট গল্প ছাপা হয়েছে শিশু–কিশোরদের মাসিক পত্রিকা কিশোর আলোতে।

ভবিষ্যতে কী করতে চান? প্রশ্ন শেষ না করতেই চটপট উত্তর এল, ‘ব্যবসা’। হ্যাঁ, তা তো করবেনই। এটাই–বা বাদ থাকবে কেন!