চলছে ভবিষ্যৎ গড়ার প্রস্তুতি

স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে গর্ব করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে গর্ব করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ধানমন্ডি ক্যাম্পাসে পা রেখে মনে হলো, এখানকার শিক্ষার্থীদের মূলমন্ত্র একটাই—পড়া, পড়া আর পড়া। কিন্তু ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তায় আঁকা আলপনা, দেয়ালে দেয়ালে ছাত্রছাত্রীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ছবিসমৃদ্ধ পোস্টার, শোকেসে সাজানো নানা প্রতিযোগিতা থেকে পাওয়া পুরস্কার, ট্রফি—এসব তো বলে পড়ালেখার বাইরেও তাঁদের দারুণ একটা জগৎ আছে। লাইব্রেরিতে, স্টাডিরুমে, ক্যাম্পাসের নিচতলায় ছড়িয়ে–ছিটিয়ে বইপত্র নিয়ে পড়ালেখায় বুঁদ হয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের দেখে ধন্দে পড়ে গেলাম।

প্রশ্নের উত্তর মিলল বিবিএর ছাত্র আবরারুল হকের সঙ্গে কথা বলে। প্রথম বর্ষের এই ছাত্রও নিচতলায় বন্ধুদের সঙ্গে বসে গ্রুপ স্টাডি করছিলেন। বললেন, ‘আজকেই আমাদের শেষ ক্লাস। ৯ তারিখ থেকে ফাইনাল পরীক্ষা।’

আচ্ছা, এবার বোঝা গেল। পরীক্ষা এসে গেছে বলেই আপাতত ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখা কর্মকাণ্ডে বিরতি পড়েছে। নইলে নাচ, গান, বিতর্ক, খেলাধুলা, আর নানা প্রতিযোগিতায় সারা বছরই সরব থাকে বেসরকারি এই বিশ্ববিদ্যালয়। আর এসব আয়োজনের জন্য আছে ১৮টি ক্লাব। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিতে এখানে বিজনেস অ্যান্ড সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ক্লাব আয়োজন করে ব্যবসায়িক ভাবনার প্রতিযোগিতা, লেখকদের নিয়ে আলোচনা সভা আয়োজন করে রাইটারস ফোরাম, ফোক ফেস্ট আয়োজনের দায়িত্ব নিয়ে নেয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি কালচারাল ক্লাব। ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে হলে যে পাঠ্যসূচির বাইরেও নানা কিছুর সঙ্গে যুক্ত হতে হয়, সেটা এই শিক্ষার্থীরা জানেন।

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির পাঠাগার ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মো. কামরুল ইসলাম। জানালেন, শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য প্রায় ৩৫ হাজার অনলাইন জার্নাল আছে এখানে। বইয়ের সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও আছে মুক্তিযুদ্ধ কর্নার। সাহিত্যের বইয়ের জন্য আলাদা একটা জায়গা চোখে পড়ল। সাময়িকী রাখার স্থানে আছে সাহিত্য পত্রিকা থেকে শুরু করে হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ। সামনে পরীক্ষা বলেই বোধ হয় এখন লাইব্রেরিতে ভিড় একটু বেশি। তাই বলে লাইব্রেরির নিরিবিলি পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটল না একটুও।

শিক্ষার্থীদের মনঃসামাজিক সহায়তার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে কাউন্সেলিংয়ের সুব্যবস্থা। প্রতি সেমিস্টারের শুরুতেই নবাগত শিক্ষার্থীদের এই সুবিধার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। কথা হলো জ্যেষ্ঠ সাইকো সোশ্যাল কাউন্সেলর নওশীন নাহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মনঃসামাজিক সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের দেশে সবার মধ্যেই একধরনের সংকোচ কাজ করে। সেটা এখানকার শিক্ষার্থীদের মধ্যেও আছে। তবু প্রতিদিনই ৪-৫ জন আমার কাছে আসে। পড়ালেখার চাপ, পারিবারিক সমস্যা, সম্পর্কের জটিলতা...এমন নানা সমস্যায় ছেলেমেয়েরা আসে। আমরা তাদের সহায়তা করি।’ সহায়তা পেয়ে মনের দুর্দশা কাটিয়ে উঠেছে অনেকেই। নওশীন নাহার বলছিলেন, ‘এমন ছাত্রও আছে, যে কি না কিছুতেই পড়ায় মন দিতে পারছিল না। সিজিপিএ ছিল ২.২০–এর কম। শেষ পর্যন্ত সে কিন্তু ৩.০–এর বেশি সিজিপিএ নিয়েই বের হয়েছে।’

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। ধানমন্ডি ক্যাম্পাস ছাড়াও এরই মধ্যে আশুলিয়ার স্থায়ী ক্যাম্পাসে ক্লাস করছেন ছাত্রছাত্রীরা। মূল ক্যাম্পাসে যাওয়া–আসার সুবিধার্থে বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে বেশি কয়েকটি নিজস্ব বাস। বিবিএ, ইংরেজি, আইন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল—এই পাঁচটি বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ আছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়েও আছে বেশ কিছু বিষয়ে পড়ার সুযোগ। ভর্তি ও অন্যান্য তথ্য সম্পর্কে জানা যাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে: www.easternuni.edu.bd/

সহিদ আকতার হুসাইন
সহিদ আকতার হুসাইন

শিক্ষার মান আমাদের শক্তি
সহিদ আকতার হুসাইন
উপাচার্য, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির শক্তি হলো এখানকার শিক্ষার মান। স্নাতক পর্যায়ে বিষয়ের সংখ্যা মাত্র ৫, শিক্ষার্থীও খুব বেশি নয়। কারণ আমরা সংখ্যায় নয়, মানে বিশ্বাসী। সেরা শিক্ষকদের আমরা নিয়োগ দিতে চেষ্টা করি। নিয়মকানুনের দিক দিয়েও এই বিশ্ববিদ্যালয় খুব কঠোর। শিক্ষক বলেন, কিংবা প্রশাসন, সবাই নিজেদের দায়িত্বটা ঠিকভাবে পালন করতে সচেষ্ট। আমাদের অনেক শিক্ষক দেশের বাইরে গবেষণার কাজ করছেন। তাঁরা ফিরে আসার পর আমাদের পাঠদান নিশ্চয়ই আরও উন্নত হবে। আশুলিয়ায় নিজস্ব ক্যাম্পাসের কাজ অনেকখানি হয়ে গেছে। বিশাল বড় ক্যাম্পাস। পুরোপুরি সেখানে স্থানান্তরিত হওয়ার পর ছাত্রছাত্রীরা নিশ্চয়ই নিজেদের ক্যাম্পাস নিয়ে গর্ব করবে।