তথ্য দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ের আওতাভুক্ত হবে: উপাচার্য

মো. আখতারুজ্জামান। ফাইল ছবি
মো. আখতারুজ্জামান। ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, র‍্যাঙ্কিংকারী একটি সংস্থার একজন প্রতিনিধি তাঁদের বলেছেন, প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ের আওতাভুক্ত হবে। লন্ডনভিত্তিক সংস্থা টাইমস হায়ার এডুকেশনের জরিপে এশিয়ার সেরা ৪১৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জায়গা না পাওয়া নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে এ কথা জানালেন উপাচার্য।

আজ শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও করণীয়’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এ সভার আয়োজন করে।

উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাঙ্কিং করে এমন দুটি নামকরা সংস্থা হচ্ছে লন্ডনভিত্তিক টাইমস হায়ার এডুকেশন ও কিউএস র‍্যাঙ্কিং। টাইমস হায়ার এডুকেশন সম্প্রতি এশিয়ার ৪১৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর র‍্যাঙ্কিং পরিচালনা করেছে, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেই। সেটি একটি আক্ষেপের বিষয় এবং আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, সম্প্রতি প্রকাশিত কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ের সমীক্ষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ায় ১২৭তম অবস্থানে রয়েছে।’

ঢাবি উপাচার্য বলেন, ‘কিউএস র‍্যাঙ্কিংয়ের বাংলাদেশের একজন প্রতিনিধি গতকাল আমাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আমাদের বললেন, আমরা যদি তথ্য দিই, তাহলে তাঁরা আমাদের আমলে নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করবেন৷ তার মানে, আমাদের তথ্যগুলো তাঁদের কাছে নেই৷ টাইমস হায়ার এডুকেশন বলেছে, আমাদের তথ্যগুলো তাদের কাছে উপস্থাপিত হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিংয়ের আওতাভুক্ত হবে।’

অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান আরও বলেন, ‘র‍্যাঙ্কিংয়ের উৎপত্তি হয়েছিল একটি কমার্শিয়াল ভেনচার নিয়ে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত এবং তার পেছনের বাজেট র‍্যাঙ্কিং একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। সেই মানদণ্ডে রাশিয়ার অনেক নামকরা অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠান র‍্যাঙ্কিংয়ে থাকে না। কারণ অন্য। বিভিন্ন বিবেচনায় র‍্যাঙ্কিংগুলোর উৎপত্তি হয়েছিল। র‍্যাঙ্কিংয়ে অবস্থান করার জন্য লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের প্রতিবছরই কিছু প্রয়াস ও উদ্যোগ থাকে, যাতে তাদের অবস্থানটা সব সময় ওপরে থাকে। এর মানে হলো এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশ্বের সেরা সেরা শিক্ষার্থী ও গবেষকদের আকৃষ্ট করতে পারে। একই মানদণ্ড বিবেচনায় রেখে যখন মূল্যায়ন করা হয় এবং একটি কমার্শিয়াল ভেনচার মাথায় থাকে, তখন আমাদের কুলিয়ে ওঠা কঠিন হয়।’

অনুষ্ঠানের মূল আলোচক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, শিক্ষার ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে। শুধু শিক্ষা দিলেই হবে না, দেখতে হবে শিক্ষার্থীরা সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে কি না। আগ্রহ না থাকার বড় কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। দেশে শিক্ষিত বেকারের হার যেভাবে বাড়ছে, তা শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ায় না।

শিক্ষার মানোন্নয়নে জাতীয় বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ এবং জিডিপির ন্যূনতম ২ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করা উচিত বলেও অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহদী আল মুহতাসিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নে করণীয় সম্পর্কে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল ও ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের প্রস্তাব পড়ে শোনান সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম। বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন তাদের প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ-প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা ও গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানায়।