ডাকসুর আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হলো শেখ হাসিনাকে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আজীবন সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ২০১৯-২০ বর্ষের জন্য ডাকসুর ১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার বার্ষিক বাজেট পাস হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ডাকসু ভবনে অনুষ্ঠিত চলতি ডাকসুর দ্বিতীয় কার্যনির্বাহী সভায় (বাজেট সভা) এসব সিদ্ধান্ত হয়।

২৩ মার্চ ডাকসুর প্রথম কার্যনির্বাহী সভায় প্রধানমন্ত্রীকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হলে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেল থেকে নির্বাচিত ডাকসুর ভিপি নুরুল হক ও সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন এর সঙ্গে দ্বিমত জানিয়েছিলেন। আজকের সভাতেও তাঁরা বিষয়টিতে আগের মতোই আপত্তি তোলেন। তবে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত অন্য ২৩ প্রতিনিধির সম্মতিতে এবার তা গৃহীত হয়েছে।

সভা শেষে আজ সন্ধ্যায় ভিপি নুরুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে যেহেতু বিতর্ক রয়েছে, তাই এই ডাকসু থেকে কাউকে আজীবন সদস্যপদ দেওয়ার বিষয়টি আমরা নৈতিকভাবে সমর্থন করি না। তবে ছাত্রলীগ চাইলে গায়ের জোরে সবই করতে পারে।’
ডাকসুর বাজেটটি ভিপি ও জিএসসহ ৯ জন সম্পাদকের মধ্যে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ডাকসুর এজিএস ও ১৩ জন সদস্যকে কোনো বাজেট দেওয়া হয়নি। এজিএস কাজ করবেন জিএসের সহায়ক হিসেবে আর ১৩ জন সদস্য কাজ করবেন ৯ জন সম্পাদকের সঙ্গে।
শুধু ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের জন্য পাস হওয়া এই বাজেটের অর্থ ব্যয় হবে। হল সংসদগুলোর জন্য হলভিত্তিক আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে বাজেট সভায় শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিমার আওতায় আনা এবং ক্যাম্পাসে গণপরিবহন নিয়ন্ত্রণ ও রিকশাভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

‘কোন খাতে কত বরাদ্দ’
ডাকসুর বাজেটে আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে ভিপিকে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা। জিএসকে তিন খাতে মোট ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে অভিষেক অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ৩০ লাখ, সাধারণ অনুষ্ঠানের খরচ হিসেবে ১৭ লাখ ও আনুষঙ্গিক খরচ হিসেবে তাঁকে বরাদ্দ করা হয়েছে ৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া, স্বাধীনতাসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদককে ১০ লাখ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদককে ১৫ লাখ, কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদককে ১০ লাখ, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদককে ১৫ লাখ, সাহিত্য সম্পাদককে ১৫ লাখ, সংস্কৃতি সম্পাদককে ১৫ লাখ, সমাজসেবা সম্পাদককে ১৩ লাখ, ক্রীড়া সম্পাদককে ২০ লাখ এবং ছাত্র পরিবহন সম্পাদককে ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর বাইরে ডাকসু কার্যালয় ব্যবস্থাপনা খাতে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।

‘২৮ বছরের অর্থের হিসাব দাবি’
দীর্ঘ ২৮ বছর ডাকসুর নির্বাচন না হলেও ডাকসুর নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ৬০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। হল সংসদের জন্যও আলাদা করে ৬০ টাকা নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব পরিচালকের দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৮ বছর ধরে নেওয়া এ অর্থের সুনির্দিষ্ট হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে নেই।

আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বাজেট সভায় ওই অর্থের হিসাব দাবি করেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত। ওই হিসাব না দেওয়া পর্যন্ত বাজেট সভার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। পরে জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেন বিষয়টি পরের কার্যনির্বাহী সভায় আলোচনা করা হবে বলে জানান।

তানভীর হাসান সৈকত প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চলে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে অর্থ নেওয়া হয়, সেটিও তাঁর বা তাঁর পরিবারের কষ্টার্জিত অর্থ। সেই অর্থের হিসাব দেওয়ার আগে ডাকসুর বাজেট সভাকে আমি বৈধ মনে করি না।’