বুয়েটে চতুর্থ দিন আন্দোলন চললেও আশ্বাস মেলেনি

১৬ দফা দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাস–সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করার আগে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম আলো
১৬ দফা দাবিতে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাস–সংলগ্ন সড়ক অবরোধ করার আগে বিক্ষোভ মিছিল করেন। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম আলো

ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নবনিযুক্ত পরিচালককে অপসারণ, সাবেকুন নাহার সনির নামে ছাত্রী হলের নামকরণসহ ১৬ দফা দাবিতে ক্লাস–পরীক্ষা বর্জন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত টানা চতুর্থ দিন আন্দোলন চললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো আশ্বাস পাননি তাঁরা।

গত ২২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন পরিচালক পদে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ওই পদটিতে নতুন নিয়োগে স্বচ্ছতা ছিল না, নিয়োগটি হয়েছে তড়িঘড়ি করে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, অধ্যাপক কাশেমের আগে পদটিতে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক সত্য প্রসাদ মজুমদার ওই পদ থেকে সরেননি, তাঁকে সরানো হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের ১৬ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে গবেষণায় বরাদ্দ বৃদ্ধি, নিয়মিত শিক্ষক মূল্যায়ন প্রোগ্রাম চালু রাখা, যাবতীয় লেনদেনের ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতির প্রবর্তন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ও ন্যাম ভবনের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করা। এ ছাড়া নির্বিচারে ক্যাম্পাসের গাছ কাটা বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতিমধ্যে যেসব গাছ কাটা হয়েছে, উপাচার্যের উপস্থিতিতে তার দ্বিগুণ গাছ লাগানোর দাবি তাঁদের। ক্যাম্পাসকে ওয়াই–ফাইয়ের আওতায় আনা, বুয়েটের প্রবেশমুখে ফটক নির্মাণ, ব্যায়ামাগার আধুনিকায়ন এবং পরীক্ষার খাতায় রোল নম্বরের পরিবর্তে কোড সিস্টেম চালুর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালকের নিয়োগ নিয়ে ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তড়িঘড়ি করে নিয়োগের বিষয়টি অধ্যাপক আবুল কাশেম মিয়া প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করে বলেন, মেয়াদ (দুই বছর) শেষ হওয়ায় অধ্যাপক সত্য প্রসাদ পদটি স্বেচ্ছায় ছেড়ে দিয়েছেন। পরে উপাচার্যের অনুরোধে তিনি ওই পদের দায়িত্ব নেন। ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকায় তড়িঘড়ি করে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, মাত্র এক দিনের নোটিশে অধ্যাপক সত্য প্রসাদকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টিকে বৈধতা দিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি পরিবারকে সময় দিতে পারেন না বলে পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, যা মিথ্যা অজুহাত। শিক্ষার্থীবান্ধব ওই অধ্যাপকের সঙ্গে প্রশাসনের এ আচরণে তাঁরা ক্ষুব্ধ।

তবে অধ্যাপক সত্য প্রসাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, স্বেচ্ছায় তিনি অব্যাহতি নিয়েছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যেসব ‘অজুহাত’ দেওয়া হয়েছে, তা সত্য নয়। নতুন পরিচালককে মেনে নেওয়ার জন্য তিনি আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে ১৫ জুন আন্দোলন শুরু হওয়ার পর থেকে গত চার দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের কার্যালয়ে যাননি উপাচার্য সাইফুল ইসলাম। নানা মাধ্যমে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক কাশেম গতকাল বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তিনি হয়তো কিছুটা ‘বিব্রত’।

দাবি আদায়ে গতকাল দুপুরে পলাশী এলাকায় বুয়েটের প্রবেশমুখে দুই ঘণ্টা রাস্তা অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এ সময় উপাচার্যের কার্যালয় ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে রাখেন আন্দোলনকারীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একজন আনিস রহমান বলেন, আন্দোলনের চতুর্থ দিনেও আশ্বাস না পাওয়ায় তাঁদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

অপসারণের দাবি ওঠায় ‘বিব্রত’ ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের নতুন পরিচালক আবুল কাশেম মিয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলো পূরণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আন্তরিক। সোমবার রেজিস্ট্রার ও ডিনদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বৈঠক হয়েছে। উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলে শিগগিরই একটি সমাধান করা হবে। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর বেশ কয়েকটি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে যৌক্তিক বলেছেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার জামী উস সানী। গতকাল তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বুয়েট ছাত্রলীগ অনেক দিন ধরে ১৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। শিক্ষার্থীদের ১৬ দফার দুটি ছাড়া সব কটিই সেখানে ছিল।’ তিনি বলেন, বুয়েট প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। দাবি না মানা হলে ছাত্রলীগ এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে অংশ নেবে।

বর্তমানে বুয়েটে ছাত্র ইউনিয়নের কোনো কমিটি নেই। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি মেহেদী হাসান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন রয়েছে। তাঁদের দাবিদাওয়া মেনে নেওয়ার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’