ঢাবির ৮১০ কোটি টাকার বাজেট পেশ

২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই বাজেট পেশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দীন। সিনেটে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাজেটের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে৷

বেলা তিনটায় সিনেট অধিবেশন শুরু হয়৷ অধিবেশনের শুরুতেই গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো ও উন্নয়ন ফি বাতিলসহ বিভিন্ন দাবিতে সিনেট ভবনের বাইরে মানববন্ধন করে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়ন। সিনেট অধিবেশনে অংশ নেওয়ার আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী তাঁদের সঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে আলোচনা করেন ও নোট নেন।

৮১০ কোটি ৪২ লাখ টাকার এ বাজেট বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ৬৯৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অনুদান দেবে আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ফি, ভর্তি ফরম বিক্রি, বেতন-ভাতা থেকে কর্তন, সম্পত্তিসহ নিজস্ব খাতগুলো থেকে ৭০ কোটি টাকা আয় হবে। এই দুই খাত থেকে ৭৬৪ কোটি ৬৫ লাখ টাকা আয় হলেও বাজেটে ৪৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ঘাটতি থাকবে।

অধিবেশনে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটও পেশ করা হয়৷ সংশোধিত বাজেটের আকার ৭৬১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা৷ ইউজিসি থেকে ৬৫৬ কোটি ৯৯ লাখ টাকা অনুদান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় ৬৬ কোটি টাকাসহ এতে মোট আয় হয়েছে ৭২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা৷ ফলে সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকা৷

‘গবেষণায় বরাদ্দ’
পণ্য ও সেবাখাত এবং অন্যান্য অনুদান খাতের আওতায় গবেষণার জন্য মোট বরাদ্দ ৪০ কোটি ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকা (বাজেটের ৫.০৪ শতাংশ), যা গতবার ছিল ৪৯ কোটি ৬ লাখ টাকা (বাজেটের ৬.৬২ শতাংশ)৷ ফলে গবেষণায় মোট বরাদ্দ এবার কমছে৷ তবে এই খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব বাজেট ও বিশেষ অনুদান মিলিয়ে প্রকৃত বরাদ্দ ১৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা (বাজেটের ২.১ শতাংশ), গতবার যা ছিল ৮ কোটি ৮৬ লাখ (১.২ শতাংশ)৷

গবেষণায় বরাদ্দ কমার বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ মো. কামাল উদ্দীন বলেন, ‘গতবার হেকেপের একটি প্রকল্প ছিল বলে গবেষণা বাজেটের আকারটি কিছুটা বড় ছিল। প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ায় এবার তা কিছুটা কমেছে। তবে ইউজিসি এবার আরেকটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে।’

‘বিএনপিপন্থী শিক্ষকের বক্তব্যের একাংশ এক্সপাঞ্জ’
সিনেট অধিবেশনে বক্তব্য দিতে গিয়ে বিএনপি-জামায়াত সমর্থক শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল থেকে নির্বাচিত সিনেট সদস্য লুৎফর রহমান বলেন, গত ১১ মার্চ ডাকসুর যে নির্বাচন হয়েছে, সেটি ছিল একটি ‘কলঙ্কিত’ নির্বাচন। দীর্ঘ সময় পর নির্বাচন উপহার দিতে পারাটা উপাচার্যের যেমন প্রশংসার ব্যাপার, তেমনি ‘কলঙ্কের’ দায়টিও এড়ানো যায় না। কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘ওই আন্দোলনের সময় উপাচার্যের বাসবভবনে হামলার ঘটনা তদন্তে যে কমিটি করা হয়েছিল, তাঁরা কী করছে? কাদের বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে?’

রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নিজাম চৌধুরী তাঁর এ বক্তব্যের আপত্তি জানালে আওয়ামী লীগ-সমর্থক শিক্ষকেরাও তাতে অংশ নেন৷ বক্তব্য শেষে লুৎফর রহমান সিনেট সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘বিরক্তিসহকারে আমার বক্তব্য শোনার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ।'

পরে সিনেট সভার সভাপতি ও উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ডাকসু নির্বাচনে কোনো কারচুপি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেনি, দু'একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে৷ তাই এটি নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই৷ অধ্যাপক লুৎফরের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বিরক্তিসহকারে নয়, সবাই ধৈর্যসহকারেই বক্তব্যটি শুনেছেন। তাই আপনার বক্তব্যের এই অংশটি এক্সপাঞ্জ করা হলো৷’

অধিবেশনে অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহউপাচার্য (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ, সাংসদ আবদুস সোবহান গোলাপ, অধ্যাপক বজলুল হক, অধ্যাপক জিয়া রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন৷

‘ছাত্রপ্রতিনিধিরা যা বললেন
১৯৯৩ সালের পর এবারই সিনেট অধিবেশনে ডাকসু মনোনীত শিক্ষার্থীদের পাঁচজন প্রতিনিধি অংশ নেন। তাঁরা হলেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক, জিএস গোলাম রাব্বানী, সদস্য তিলোত্তমা শিকদার এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস৷

সিনেট অধিবেশনে বক্তব্য দেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী। জিএস গোলাম রাব্বানী রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের অধিভুক্তির বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলা ও অটোমেশনের আওতায় আনাসহ বেশ কয়েকটি দাবি জানান। ডাকসু নির্বাচনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেও কোনো ‘অনিয়ম’ হয়নি বলে দাবি করেন তিনি৷

বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন-ব্যবস্থা ও খাবারের মানোন্নয়নের দাবি জানান ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে অ্যালামনাইদের সম্পৃক্ত করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উন্নয়ন ও পরিধি বাড়ানো, ডাকসুর বাজেট বাড়ানোসহ কয়েকটি দাবি জানান তিনি।