স্বেচ্ছাসেবার আনন্দ

ইরতিজা হক ওসমানী
ইরতিজা হক ওসমানী

‘ট্রেনে করে ক্যাম্পাস থেকে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে বললেন, আপনার জন্য এখন আমার দিনে ৬ বার করে হাত ধুতে হয়। আপনি আমার ছেলের স্কুলে গিয়ে তাকে হাত ধোয়া শিখিয়ে এসেছিলেন, আর এখন আমি বাইরে থেকে এলেই ছেলে বলে বাবা ভালো করে হাত ধুয়ে নাও।’ এভাবেই মুঠোফোনের অপর প্রান্ত থেকে হাসিমুখে কথাগুলো বলছিলেন ইরতিজা হক ওসমানী।

জামালপুরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী ইরতিজা। স্কুলের গণ্ডি পেরিয়েছেন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে আর উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন ঢাকার নটর ডেম কলেজ থেকে। ছোটবেলা থেকেই যুক্ত ছিলেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে। আর এখন তো রীতিমতো আন্তর্জাতিক বেশ কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে জড়িত ইরতিজা।

ক্যাম্পাসের জুনিয়র থেকে শুরু করে সিনিয়র, এমনকি শিক্ষকদের প্রায় সবার কাছেই পরিচিত মুখ ইরতিজা। ক্যাম্পাসের নবীনবরণ থেকে শুরু করে বর্ষবরণ সবকিছুতেই পাওয়া যায় তাঁকে। কখনো কখনো দেখা যায়, মঞ্চে মাইক হাতে উপস্থাপনার কাজটিও করছেন তিনি।

ইরতিজা বলেন, মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়েই তিনি ডাক্তারি পড়তে এসেছেন। আর এ জন্যই হয়তো সময় পেলেই স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করেন। ক্যানসার সচেতনতা এবং প্রতিরোধ, মেয়েদের মাসিকসংক্রান্ত ভুল ধারণা দূরীকরণ এবং শিশুদের হাত ধোয়ার উপকারিতা নিয়ে কাজ করছেন তিনি। এই তো কিছুদিন আগেই এওয়েআরনেস থ্রিসিক্সটি নামে একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হয়ে জামালপুরের স্কুলগামী ৮০০ শিক্ষার্থীর মাঝে হাত ধোয়ার উপকারিতা নিয়ে কাজ করেছেন বলে জানালেন ইরতিজা। এ ছাড়া মাসিক নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করেছেন জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার ১ হাজার নারীদের মধ্যে। অংশ নিয়েছিলেন গ্লোবাল ইয়ুথ লিডারশিপ কনফারেন্সে। ২০১৭ সালে আমন্ত্রণ পান নেপালের রিলিজিয়াস ইয়ুথ সার্ভিসে। ইউনিভার্সাল পিস ফাউন্ডেশন, নিউইয়র্কের অ্যালামনাইদের একজন ইরতিজা।

মো. মোজাম্মেল হক ও ইশরাত শাহীন দম্পতির দ্বিতীয় সন্তান ইরতিজা ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে পুরস্কার লাভ করেছেন। জাতীয় শিশুকিশোর প্রতিযোগিতা বিভাগীয় পর্যায়ে রচনা ও গল্পবলায় প্রথম স্থান, জেলা পর্যায়ে বিতর্কে চ্যাম্পিয়ন, গণিত অলিম্পিয়াড ও ভাষা প্রতিযোগে জাতীয় পর্যায়ে অংশ নিয়ে দ্বিতীয় স্থানসহ ঝুলিতে রয়েছে আরও অনেক পুরস্কার।

অবসরে ঘুরতে ও বই পড়তে ভালোবাসেন ইরতিজা। আইটেম, কার্ড, টার্ম, প্রফ শেষ হলেই বেরিয়ে পড়েন দেশ ও দেশের বাইরে ঘুরতে। এখন পর্যন্ত ঘুরেছেন বিশ্বের পাঁচটি দেশে। নানা দেশ ঘুরেই নিজেকে আরও পরিণত করতে চান তিনি।