'পাবলিক পরীক্ষা যত কম হয় ততই মঙ্গল'

বাংলাদেশে ভালো শিক্ষক পাওয়া এখন একটি বড় সমস্যা বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, মেধাবীদের শিক্ষকতায় নিয়ে আসতে হবে। জ্ঞানী, একই সঙ্গে সেই জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহী—তেমন শিক্ষক দরকার।

আজ সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক আলোচনাসভায় সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এসব কথা বলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আয়োজিত এই আলোচনাসভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তিনি। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘গুণগত শিক্ষা, প্রতিবন্ধকতা ও উত্তরণ’।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মেধাবী শিক্ষক হওয়ার অর্থ কেবল জ্ঞানী হওয়া নয়, শিক্ষকতায় আগ্রহীও হওয়া চাই। অন্য চাকরি পাননি বলে শিক্ষক হয়েছেন—এমন লোকদের দিয়ে কুলাবে না। জ্ঞানী, জ্ঞানকে অন্যের কাছে পৌঁছে দিতে এবং পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় নিজেকে সমৃদ্ধ করতে উৎসাহীদের শিক্ষাক্ষেত্রে টেনে আনতে হলে বেতন-ভাতা সম্মানজনক হওয়া চাই। শিক্ষকের বেতন-ভাতা অন্য পেশাজীবীদের চেয়ে বেশি হওয়া বাঞ্ছনীয়, যাতে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসেন এবং কোচিং সেন্টারে না গিয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদানেই নিবিষ্টচিত্ত হন।

প্রবীণ এই অধ্যাপক বলেন, ‘আজকাল যে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। যেটুকুই-বা দেওয়া হচ্ছে, তাও শিক্ষার্থী ঠিকভাবে গ্রহণ করতে পারছে না। তার সার্বক্ষণিক ভয় পরীক্ষার। আমাদের বিদ্যায়তনিক শিক্ষা সব সময়ই পরীক্ষামুখী ছিল, এখন সেটা রীতিমতো পরীক্ষাকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। যা পড়ানো হচ্ছে, তা পরীক্ষায় পাসের জন্য। পরীক্ষা, বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষা, যত কম হয় ততই মঙ্গল। কারণ, পরীক্ষার ব্যাপারে চাপ যত বাড়ে, মূল বই পড়ার প্রয়োজন তত কমে যায়। আর পরীক্ষাগুলোয় যে এমসিকিউ প্রশ্নরীতি চালু রয়েছে, এটা খুবই ক্ষতিকর। এতে শিক্ষার্থীরা এমনকি প্রশ্নটাও ভালো করে বুঝতে চায় না, কেবল এ-বি-সি-ডি-তে দাগ দেওয়ার কায়দা শেখে। আরেক উৎপাদন ‘সৃজনশীল পদ্ধতি’ ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক কেউই ঠিকমতো বোঝেন না। এই পুরো ব্যবস্থা কোচিং সেন্টার ও গাইড বুক ব্যবসাকে সরগরম করে।’

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা সম্পর্কে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার মান অতীতে যে খুব উঁচুতে ছিল এবং এখন যে খুব অধঃপতিত, তা নয়। আসলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ কমেছে। তারা আসে, থাকে, চলে যায়। শিক্ষার ব্যাপারে তাঁদের প্রবল আগ্রহ দেখা যায় না। কারণ, এতে তাঁরা কোনো ভবিষ্যৎ দেখতে পায় না, জীবিকার নিশ্চয়তা দেখতে পায় না। বেকারত্বের সমস্যা ক্রমাগত বাড়ছেই। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর গ্রহণক্ষমতা খুব বড় ব্যাপার। আগ্রহের অভাব ঘটলে গ্রহণক্ষমতা হ্রাস পায়।’

সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান। গুণগত শিক্ষার প্রতিবন্ধকতা উত্তরণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বলে জানান তিনি। বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীকে প্রধান করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বতন্ত্র একটি পরামর্শ সেল তৈরি করা হবে। এর নাম হবে ‘কমিটি ফর এক্সিলেন্স ইন এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ’। এর সদস্যরা গবেষণা করবেন, মূল্যায়ন করবেন এবং পরামর্শ দেবেন। গুণগত শিক্ষার জন্য, শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য কী কী করণীয়, সেগুলো তাঁরা চিহ্নিত করবেন। এ ছাড়া ২০২১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষপূর্তি উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে একটি কাউন্ট ডাউন ঘড়ি নির্মাণ করার কথাও জানান উপাচার্য।

আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মারক সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এর আগে সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে দিনের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন উপাচার্য।

বঙ্গবন্ধুকে ডি-লিট দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) উপাধি দেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ২০২০-২১ সালে সরকারঘোষিত ‘মুজিব বর্ষ’ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুকে সম্মানসূচক এই উপাধি দেওয়া হবে।

আজ সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মল চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজনের উদ্বোধনী বক্তব্যে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এ তথ্য জানান।