বিপণনের মানুষের জন্য

মার্কেটিং ডে উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বিপণন খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা
মার্কেটিং ডে উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন বিপণন খাতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা

শুক্রবার সকাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির সবুজ ঘাসে তখন টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা। ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা। এরই মধ্যে সবুজ মাঠ ভরে গেল সাদা ক্যাপ আর সাদা টি-শার্টে। দেশের বিপণন খাতের পেশাজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে নতুন সুযোগ তৈরির লক্ষ্যে দ্বিতীয়বারের মতো সেদিন উদ্​যাপিত হলো বাংলাদেশ মার্কেটিং ডে। এর আগে বৃহস্পতিবার দেশের প্রায় সব স্নাতক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মার্কেটিং বিভাগের উদ্যোগে ‘ভোক্তাই প্রথম’ শিরোনামে শুরু হয় এই আয়োজন। আয়োজক বাংলাদেশ মার্কেটার্স ইনস্টিটিউট। 

বেলুন ওড়ানোর পর শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। উদ্​যাপন পরিষদের প্রধান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মীজানুর রহমান বলেন, মার্কেটিং একটি গতিশীল বিষয়। মার্কেটিং গুরু ফিলিপ কটলার তাঁর বইয়ের প্রতিটি সংস্করণে মার্কেটিংয়ের নতুন সংজ্ঞা দেন। আজকাল শুধু পণ্যই পণ্য নয়। বিক্রয়োত্তর সেবা এবং প্যাকেটিংও পণ্যের আওতায় পড়ে। এসব বিষয় মাথায় রেখেই ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। 

বাইরে যখন প্রচণ্ড বৃষ্টি নামল, অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে তখন মঞ্চে চলছে নাচ। মিলনায়তনের বাইরে ছিল বিভিন্ন পণ্যের স্টল। স্টল ঘুরতে ঘুরতে দেখা হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী এ এস এম সায়েমের সঙ্গে। সায়েমের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস। বলছিলেন, ‘প্রথম বর্ষেই এ রকম একটা দারুণ আয়োজন পেলাম। মার্কেটিং বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ হলো। মার্কেটিং বিষয়টা আসলে মাঠে কেমন, সেটা ভালোমতো জানতে পারছি।’ সায়েমের কথাকেই বিশদভাবে ব্যাখ্যা করেন আয়োজনের যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আশিক ইকবাল। তিনি বলেন, ‘ক্লাসে সাধারণত মার্কেটিংয়ের প্রাথমিক জ্ঞান দেওয়া হয়। আমরা একটি মেলবন্ধন তৈরি করতেই এই অনুষ্ঠান আয়োজন করি। মার্কেটিং জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিরা তাঁদের ব্যবহারিক জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন। এতে তত্ত্ব ও বাস্তব—দুটো জ্ঞানই শিক্ষার্থীরা পাচ্ছেন।’ 

ওদিকে মিলনায়তনের ভেতরে তখন কেক কাটার পর্ব শুরু হয়ে গেছে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের শুভেচ্ছা বক্তব্যের পর মধ্যাহ্ন বিরতি। এরপর ভিন্ন আদলে হাস্যরসাত্মক আঞ্চলিক বিতর্ক—নিজ নিজ এলাকার ‘ব্র্যান্ড’ তুলে ধরলেন বিতার্কিকেরা। অনুষ্ঠানের মেজাজ পাল্টাতে মঞ্চে ওঠেন ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেহজাদ মুনিম। নিজের জীবনের উদাহরণ টেনে অনুপ্রেরণামূলক গল্প শোনান তিনি। তিনি বলেন, ‘মার্কেটিংয়ে সেলস লেভেলের কাজকে অনেকে ছোট মনে করেন। হীনমন্যতায় ভোগেন। অথচ এটা মোটেই অমর্যাদাকর নয়। পরিশ্রম করলে ঠিকই ওই জায়গা থেকে উচ্চ আসনে বসা যায়। প্রমাণ হিসেবে আমাকে তো দেখতেই পাচ্ছেন।’ 

অনুষ্ঠান শেষে আয়োজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা হয় আয়োজক পরিষদের সদস্যসচিব শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তাঁর ভাষায়, ‘দেশের বিপণন খাতে যুক্ত ৪৫ লাখ মানুষের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে পেশাগত উৎকর্ষ অর্জনের জন্যই এই মার্কেটিং ডে। আমাদের জানামতে, বিশ্বের কোনো দেশে এখনো জাতীয়ভাবে মার্কেটিং ডে উদ্​যাপিত হয় না। আমরা জুলাই মাসের দ্বিতীয় শুক্রবারকে বৈশ্বিকভাবে মার্কেটিং ডে উদ্​যাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’