পাসের হারে এগিয়ে মেয়েরা, জিপিএ-৫-এ ছেলেরা

ফলাফল ঘোষণার পর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার দিনাজপুর হলিল্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো
ফলাফল ঘোষণার পর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ি এলাকার দিনাজপুর হলিল্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবার উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট পরীক্ষায় বেড়েছে পাসের হার। পরীক্ষায় পাসের দিক থেকে এগিয়েছেন মেয়েরা। অন্যদিকে জিপিএ-৫-এর ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন ছেলেরা। এ বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থীই পাস করেননি।

বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. তোফাজ্জুর রহমান বলেন, কলেজে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছেন, এমন শিক্ষার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই এ বছর পাসের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, যে কলেজগুলো থেকে কোনো শিক্ষার্থী পাস করেননি, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেসব কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম, সেগুলোর নিবন্ধন বাতিল করার পক্ষেও মতামত দেন তিনি।

বুধবার দুপুর ১২টার দিকে বোর্ড মিলনায়তনে এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপসচিব মো. আবদুর রাজ্জাক, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. মানিক হোসেন, মো. হারুন অর রশিদ, সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক রেজাউল করিম চৌধুরী, বিদ্যালয় পরিদর্শক আবু হেনা মোস্তফা কামাল প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এ বছর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৬৫৮টি কলেজ অংশ নেয়। এর মধ্যে শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০টি। ২০১৮ সালে শতভাগ পাস করেছিল ১৪টি প্রতিষ্ঠান, ২০১৭ সালে ১১টি ও ২০১৬ সালে ১১টি।

এ বছর মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো শিক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হয়নি। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার আলহাজ্ব তমিজউদ্দিন কলেজ, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার সিংগার ডাবরীহাট বিএল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ঘনশ্যাম স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আদিতমারী উপজেলার নামুরী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার পীরগঞ্জ আদর্শ কলেজ, দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার বেপারীতলা আদর্শ কলেজ, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা এম এম আলহাজ্ব হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্কুল অ্যান্ড কলেজ।

ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৬৫৮টি কলেজ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে পাস করেছেন ৮৯ হাজার ২৩৩ জন। পাসের হার ৭১.৭৮ শতাংশ। ২০১৮ সালে এই বোর্ড থেকে পাসের সংখ্যা ছিল ৭১ হাজার ৯৫১ জন, ২০১৭ সালে ৬৮ হাজার ৯৭২ জন ও ২০১৬ সালে ৭২ হাজার ৮২৯ জন। অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৭ হাজার ১৪৬ জন।

শুধু পাসের হার নয়, বেড়েছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। এ বছর মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪৯ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২ হাজার ২৭২ জন ও ছাত্রী ১ হাজার ৭৭৭ জন। বিগত ৩ বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। ২০১৮ সালে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২৯৭ জন, ২০১৭ সালে ছিল ২ হাজার ৯৮৭ জন এবং ২০১৬ সালে ছিল ৩ হাজার ৮৯৯ জন।

এবারে বিজ্ঞান বিভাগে অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ২৮ হাজার ২৫৪ জন। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ২২ হাজার ৭৭৫ জন, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ৮০.৬১ শতাংশ। মানবিক বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিলেন ৮০ হাজার ৪৩৫ জন। এর মধ্যে কৃতকার্য হয়েছেন ৫৫ হাজার ৮২৫ জন, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ৬৯.৪০ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষার্থী অংশ নিয়েছিলেন ১৫ হাজার ৬২৬ জন। কৃতকার্য হয়েছেন ১০ হাজার ৬৩৩ জন, যা শতকরা হিসাবে দাঁড়ায় ৬৮.০৫ শতাংশ।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে রংপুর বিভাগের মোট ৮টি জেলার পরীক্ষার্থীরা অংশ নেন। এর মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে আছে রংপুর জেলা। এই জেলায় পাসের হার ৭৬.৪৭ শতাংশ। ৭৫.৮৫ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় হয়েছে নীলফামারী এবং ৭৩.১২ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছে গাইবান্ধা জেলা। এ ছাড়া লালমনিরহাটে ৭২.০৫, কুড়িগ্রামে ৭১.১৭, দিনাজপুরে ৭০.২২, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬৭.৭৩ এবং পঞ্চগড় জেলায় ৫৭.৯৮ শতাংশ পরীক্ষার্থী পাস করেছেন।

এদিকে সবচেয়ে বেশি জিপিএ-৫ পেয়েছে রংপুর জেলা থেকে। এই জেলায় মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ২৬৬ জন। ৬৯৫ জন জিপিএ-৫ পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে দিনাজপুর এবং ৪৭৮ জন জিপিএ-৫ পেয়ে তৃতীয় স্থানে আছে নীলফামারী জেলা। এ ছাড়া গাইবান্ধা জেলায় ২৮৩ জন, কুড়িগ্রামে ১৩৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ১০২ জন, লালমনিরহাটে ৬৩ এবং পঞ্চগড় জেলায় মোট ২৯ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।