জয়ের প্রত্যয়ে

শারমিন ইসলাম
শারমিন ইসলাম

আর্মি মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়ার পর, মা-বাবা ধরেই নিয়েছিলেন মেয়ে ডাক্তার হতে চলেছে। কিন্তু না, শারমিন ইসলাম পড়লেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন বিভাগে। চারপাশে তখনই রীতিমতো শোরগোল শুরু হলো! একে তো বাজারে নেই চাকরি, তার ওপর মেয়ে হয়ে পশুপালন!

নানা মন্তব্যে অতিষ্ঠ হয়ে শারমিন একদিন পণ করেই বসলেন, এই বিভাগেই কিছু করে দেখাবেন। প্রথম সেমিস্টারেই বড় ব্যবধানে প্রথম হওয়া দিয়ে তাঁর শুরু। পরে পড়ালেখায় ভালো ফলের জন্য ‘বেস্ট স্টুডেন্ট অব দ্য সেমিস্টার’ মনোনীত হওয়া ছাড়াও পেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বৃত্তি।

সহশিক্ষা কার্যক্রমেও পিছিয়ে নেই শারমিন। রবি ইয়ুথ ফেস্টের আঞ্চলিক পর্যায়ে শারমিন সেরা দশে ছিলেন। দেশ ছাড়িয়ে একসময় নেপাল ইয়ুথ ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক গ্লোবাল ইয়ুথ প্রোগ্রামে ভারতে নিজের দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। জিভিয়াই স্কলারশিপে আইভিএইচকিউয়ের অধীনে শিক্ষানবিশির সুযোগ পান অস্ট্রেলিয়ায়। অস্ট্রেলিয়াতেই স্টারমাস আয়োজিত আন্তর্জাতিক গল্প লেখা প্রতিযোগিতায় ছিলেন টপ ফাইনালিস্ট।

আন্তর্জাতিক ওয়ার্ল্ড ইয়ুথ ফোরামের সদস্য শারমিন এখন আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে৷ শিক্ষানবিশি করছেন জাপানে। জাপানের সিন্সু বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি বিভাগের পশু পুষ্টি ও পশুখাদ্য বিভাগের ল্যাবে কাজ করছেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি সেখানে শারমিন পড়াচ্ছেনও! জাপানেই ‘সাভা হলিস্টিক একাডেমি’তে খণ্ডকালীন ইংরেজি শিক্ষকের দায়িত্বে আছেন।

ক্যাম্পাসের সাইক্লিস্টদের দলে আছেন, আছেন ফটোগ্রাফি সোসাইটিতেও। আত্মরক্ষার উদ্দেশ্য ছাড়াও নিজেকে ফিট রাখতেই বাংলাদেশ দ্য সিতো কারাতে অ্যাসোসিয়েশনে নিয়মিত ছিলেন।

নারীদের নিয়ে কাজ করার সুবাদে যেমন উইল ম্যাগাজিন প্রশংসিত করে তাঁকে। সামাজিক কাজকর্মের জন্যেও তিনি অর্জন করেন ‘লিডার অব দ্য ফিউচার’ অ্যাওয়ার্ড। তবে ক্যাম্পাসে শারমিন সাড়া ফেলেছিলেন তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে। ক্যাম্পাসের প্রথম কেটারিং সার্ভিস ‘টিফিন’ শুরু করেন তিনি। যার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কম দামে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয়।

জীবনের প্রায় প্রতিটি ধাপেই নিজেকে সফল মনে করেন শারমিন ইসলাম। স্বপ্ন ছুঁয়ে এই পথচলা আরও এগিয়ে নেওয়াই তাঁর দৃঢ় সংকল্প। একাই ঘুরে বেরিয়েছেন দেশে ও দেশের বাইরে নানা স্থানে। বদ্ধ ঘরে না থেকে রোমাঞ্চকর জগৎটার সব রকম অভিজ্ঞতা চান তিনি।

শারমিন ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ