সবচেয়ে বড় ক্যাম্পাস

এই শাটল ট্রেনেই গল্প, আড্ডা, গানে জমে ওঠে কত বন্ধুত্ব! ছবি তুলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র অনিক গোমস্তা
এই শাটল ট্রেনেই গল্প, আড্ডা, গানে জমে ওঠে কত বন্ধুত্ব! ছবি তুলেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র অনিক গোমস্তা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়—বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থেকে শুরু করে জাতিগত বৈচিত্র্য—সবই যেন ফুটে উঠেছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠে। আয়তনে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসই যেন এক বিশাল ক্লাসরুম।

সেই ক্লাসরুমেরই ছাত্র, আমি পড়ছি আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষে। বাংলাদেশের আইনি জগতের সব ক্ষেত্রে নিজেদের সাফল্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রাখার পাশাপাশি এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্য সব ক্ষেত্রেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ রেখেছেন। আইনের বিশ্বসেরা প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানই এই বিভাগের শিক্ষার্থীদের পদচারণে মুখর হয়েছে। তাঁরা গৌরবের সঙ্গে প্রতিনিধিত্ব করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি), তথা বাংলাদেশের। আমার উচ্চশিক্ষাজীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো এই বিভাগে পড়ার সুযোগ পাওয়া।

আমাদের দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সচরাচর মেধাবী শিক্ষার্থীরাই অধ্যয়ন করার সুযোগ পায়। কর্মজীবনে যারা অধিকাংশই শহরে বসবাস করে৷ শিক্ষার্থীরা, যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কথা ভাবছ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তোমাদের দেবে শহুরে আর গ্রামীণ জীবনের এক পরিপূর্ণ সংমিশ্রণ। উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি জীবনে এ ধরনের অভিজ্ঞতার প্রয়োজনও কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। তা ছাড়া চবিতে পড়ার সময়ে প্রত্যেক শিক্ষার্থীরই ‘অফিস করার’ একটা অভ্যাস হয়ে যায়। চট্টগ্রাম শহর থেকে যারা ক্লাস করতে আসে; তাদের মধ্যে সকাল ৯টার ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার জন্য একধরনের তাড়া কাজ করে। সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা, তারপর শাটল ট্রেন ধরা—সব মিলিয়ে একটা গতিশীলতা কাজ করে জীবনে। তাই একটি রুটিন লাইফের জন্য উচ্চশিক্ষাজীবনে চবি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।

চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরের এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শহরের যোগাযোগব্যবস্থা বেশ উন্নত। নির্ধারিত সময়ে শাটল ট্রেন ছাড়াও রয়েছে সার্বক্ষণিক লোকাল বাসের সুবিধা। তবে শাটল ট্রেনের একটা অন্য রকম মায়া আছে। সব বন্ধুবান্ধব প্রতিদিন একসঙ্গে একই সময়ে ট্রেন ধরা থেকে শুরু করে একসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া পর্যন্ত বন্ধুদের মধ্যে যে মায়ার বন্ধন গড়ে ওঠে, তা অন্য রকম সুন্দর। তাই চবির বন্ধুত্বগুলোর পেছনে এই শাটল ট্রেনের ভূমিকাও যে কম নয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। শহর থেকে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া-আসার পথে প্রায় ২ ঘণ্টা সময় লাগে। এই সময়ে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া ছাড়াও মুঠোফোনে গান শোনা, সিনেমা দেখা, বই পড়া ছাড়াও অনেক ধরনের সৃজনশীল কাজ করে নেওয়া যায়। এমনকি আসা-যাওয়ার পথেই নিজেদের প্রতিদিনের পড়ার অনেকটুকুই শেষ করে রাখা যায়। জানিয়ে রাখি, শাটল ট্রেনের জন্য বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতনের সঙ্গে নামমাত্র একটি এককালীন ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া যারা হলে থাকতে আগ্রহী; তাদের থাকার জন্য রয়েছে ৮টি ছাত্র হল, ৪টি ছাত্রী হল এবং ১টি ছাত্রাবাস। নির্ধারিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে একজন শিক্ষার্থী এগুলোতে থাকার অনুমতি পেতে পারে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাগমুক্ত। দেশের অনেক নামী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও যেখানে এই ভয়ংকর অন্যায় ‘ট্র্যাডিশন’ এই নামে টিকে আছে, সেখানে চবি ব্যতিক্রম। যথাসময়েই একজন শিক্ষার্থী স্নাতক সম্পন্ন করতে পারে। তাই নিজের গাফিলতি ছাড়া পিছিয়ে থাকার কোনো উপায় নেই! তাহলে উচ্চশিক্ষার জন্য চবি কেন নয়?

আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়