প্রাণের টানে বছর ১৯ পর

পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত
পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

সকাল থেকেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছিল। ১৯ বছর পর প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার তাড়া সবার মধ্যে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি ফেরা বন্ধুদের জড়ো হওয়ার কথা ছিল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ মাঠে। শঙ্কার সব মেঘ সরিয়ে বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে ১৪ আগস্ট সব বন্ধু এক হয়েছিলাম প্রিয় ক্যাম্পাসে। উপলক্ষ, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে পড়া এইচএসসি ২০০০ ব্যাচের পুনর্মিলন। কাজটা সহজ ছিল না। তিন মাস আগে যা ছিল কয়েকজন বন্ধুর স্বপ্ন, সেটাই সত্যি করতে পেরেছিলাম সবাই। উদ্যোগটা প্রথমে নেয় বন্ধু হ্যাপি নাভিদ। এরপর হ্যাপি সেই ইচ্ছার কথাটা জানিয়েছিল কামরুজ্জামান, জাহিদুর রহমান ও নাহিদ পারভীনকে। শুরুতে ঢাকায় কয়েক বন্ধু মিলে রেস্টুরেন্টে বসে প্রাথমিক আলোচনা করি। এরপর শুরু নাম নিবন্ধনের পালা। অবশেষে আমরা এক শ জন বন্ধু প্রাণের টানে এক হই কলেজ ক্যাম্পাসে।

শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পুনর্মিলনের উদ্দেশে বানানো নীল রঙের টি-শার্ট পরে সবাই যেন হয়ে যাই একেকটি নীলকণ্ঠী পাখি। এরপর কলেজ থেকে দুটি বাস ভর্তি করে সবাই চলে গেলাম শহরের উপকণ্ঠে কুমারখালী আলাউদ্দিন পার্কে। সারা দিন হইচই, গান–বাজনা, খাওয়াদাওয়া...কী ছিল না? পুরোনো বন্ধুদের পেয়ে সবাই এক দিনের জন্য ফিরে গিয়েছিলাম কলেজজীবনে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, মেহেরপুর—সারা দেশে ছড়িয়ে–ছিটিয়ে থাকা বন্ধুরা সেদিন এসেছিল শুধুই প্রিয় মুখগুলো দেখতে।

পার্কের ছাদের দোতলা বারান্দায় বন্ধু জি এম সালাউদ্দিন, মহিদ বাপ্পী, হ্যাপী নাভেদ মিলে গাইল পুনর্মিলনী উপলক্ষে তৈরি গান—‘একটা নতুন সূর্য, একটা নতুন দিন। আকাশে-বাতাসে আনন্দ ধ্বনি, এসো বন্ধু সবে, মিলি প্রাণের উত্সবে।’ গানের সঙ্গে চলল নাচ। সবার বয়স যেন কমে গিয়েছিল ২০ বছর!

পুনর্মিলনীতে আসা সবার ছেলেমেয়েদের জন্য ছিল বিশেষ পুরস্কার। ছিল র‌্যাফল ড্র। অকালে ছেড়ে যাওয়া তিন বন্ধু—কৌশিক আহমেদ, সাজ্জাদ হোসেন ও আসাদুজ্জামানের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিট নীরবতা। সব শেষে কেক কাটা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার আগেই বাড়ি ফেরার তাড়া সবার। বন্ধুরা মিলে তখনো গেয়ে চলেছি, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়...।’