ডেঙ্গু রোধে সানিডেইলের শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে সানিডেইল স্কুলের এই শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে সানিডেইল স্কুলের এই শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষার্থীদের দলটির সবাই সানিডেইল স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। সংখ্যায় ৫০ জনের বেশি। রাজধানীর ধানমন্ডিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তারা ডেঙ্গুবিষয়ক সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করছে। এই দলের একটা নামও আছে—ইচ্ছেঘুড়ি। স্রেফ ইচ্ছে হলো বলেই যে তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দরজায় টোকা দিচ্ছে, তা নয়। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে, পরিকল্পনা করে ও প্রস্তুতি নিয়েই এই কিশোর-কিশোরীরা পথে নেমেছে। ওরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছে। জেনেছে ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ, প্রতিরোধে করণীয়, এডিস মশার উৎপত্তিস্থল, ভয়ংকর শক সিনড্রোম ও ভাসকুলার লিকেজ সম্পর্কে। ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে যুদ্ধে এটাই তাদের পূর্বপ্রস্তুতি!

ঢাকা ও ঢাকার আশপাশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে বলেই একটা কিছু করার তাগিদ অনুভব করছিল সানিডেইলের শিক্ষার্থী অর্পা বণিক ও তার বন্ধুরা। কেন এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা মাথায় এল? জানতে চাই তার কাছে। অর্পা বলল, ‘সব কাজের দায়িত্ব শুধু কর্তৃপক্ষের হবে কেন? আমরা শিক্ষার্থীরা একজোট হয়ে তো এই দুর্যোগের সময় কিছু করতে পারি। তাই আমরা ঘরে বসে থাকতে চাইনি। মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছি।’

প্রচারণার অংশ হিসেবে যেসব জায়গায় লোকসমাগম হয়, যেমন হাসপাতাল, সুপার মার্কেট, মসজিদ ইত্যাদি জায়গায় গিয়ে লিফলেট পৌঁছে দিয়েছে ছাত্রছাত্রীরা। মানুষকে বলেছে, কীভাবে ডেঙ্গু থেকে বাঁচা যায় এবং অন্যকেও বাঁচানো যায়।

অর্পাদের এই বিশেষ কর্মসূচি দেখে অনেকেই উৎসাহ দিয়েছেন, প্রশংসা করেছেন। কেউ বাসায় ডেকে নাশতা করে যেতে বলেছেন, খুশি হয়ে কেউ দিয়েছেন চকলেট। এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে যাঁরা চিকিৎসক, তাঁরা নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে যথাসম্ভব সহায়তা করেছেন, তথ্য দিয়েছেন। বাধা যে আসেনি তা নয়। তাতে এই ছেলেমেয়েরা দমে যাওয়ার পাত্র নয়।

এই কর্মসূচির একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের দেখা হয় কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকের সঙ্গে। তাঁকেও একইভাবে সচেতনতা কার্যক্রম সম্পর্কে জানায় তারা। আনিসুল হক বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা দেশ নিয়ে, মানুষ নিয়ে এতটা ভাবে; এতটা ব্যথিত হয়, ওদের এই উদ্যোগী ও উদ্যমী ভাব দেখে আমি বড় আশায় বুক বাঁধছি।’

ইচ্ছেঘুরির উদ্যোক্তা মূলত সাত বন্ধু। অর্পা, আয়েশা, অর্থী, মাইসুন, ফাতেমা, নাজিফ ও রাহিদন। ভবিষ্যতেও এ ধরনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার স্বপ্ন দেখছে তারা। কিছুটা হলেও অন্যের কষ্ট লাঘব করাটা তাদের মূল লক্ষ্য। এর সদস্যরা মনে করে, এ ধরনের কাজ অব্যাহত রাখার মাধ্যমে দেশে সত্যিকার অর্থে একটা ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করা সম্ভব। শুরুটা না হয় ধানমন্ডি থেকে হলো। নিজেদের শহর ‘ঢাকা’কে পরিচ্ছন্ন করতে কাজ করবে ইচ্ছেঘুড়ি। ময়লা ফেলার ঝুড়ি রাখা, পোস্টার লাগানো, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে খাতা-কলম বিতরণ, সবাই মিলে গাছ লাগানো—এমন অনেক পরিকল্পনা কথা বলছিল তারা। অন্তত একজন মানুষের জীবন হলেও যেন বদলে দেওয়া যায়, সেটাই ইচ্ছেঘুড়ির মূল ভাবনা।