চীনের জিয়ামেনে সামার কোর্সের উৎসব

চীনের জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের সামার কোর্সে অংশগ্রহণকারী তরুণ পেশাজীবী ও শিক্ষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
চীনের জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ের সামার কোর্সে অংশগ্রহণকারী তরুণ পেশাজীবী ও শিক্ষকেরা। ছবি: সংগৃহীত
প্রতিবছর চীনে গ্রীষ্মকালে বেশ কিছু ‘সামার প্রোগ্রামে’ বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পান তরুণ পেশাজীবীরা। গত জুলাই মাসে চীনের জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক আইনের ওপর তিন সপ্তাহব্যাপী ‘সামার প্রোগ্রামে’ অংশ নিয়েছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক শাখাওয়াত শামীম। তিনি জানালেন এ রকম আরও নানা সুযোগের কথা

কথায় আছে, বিদ্যা অর্জনে প্রয়োজনে সুদূর চীনে যাও। তবে ভাষাগত জটিলতার কারণে চীনে পড়তে যাওয়া কয়েক বছর আগেও সহজ ছিল না। এখন শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বায়ন শুরু করেছে চীন। সে দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর গ্রীষ্মে আয়োজন করে বেশ কয়েকটি গ্রীষ্মকালীন প্রোগ্রাম, যেখানে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবীরা অংশ নিতে পারেন।

দক্ষিণ-পূর্ব চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের জিয়ামেন মূলত পর্যটন নগরী। শহরের কোলে এসে ভিড়েছে দক্ষিণ-চীন সাগর। কিন্তু এখন প্রতি বছর গ্রীষ্মকালে এই শহরের প্রায় পুরোটাজুড়ে ছড়িয়ে থাকা জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয় মেতে ওঠে বিশ্বের আনাচকানাচ থেকে আসা শত শত অংশগ্রহণকারীর কলরবে। গ্রীষ্মকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিভাগ এক সপ্তাহ থেকে এক মাসব্যাপী নানা রকম প্রোগ্রাম চালু করে। যেখানে পুরো চীন থেকে তো বটেই, গোটা বিশ্ব থেকেই তরুণ পেশাজীবীরা অংশ নেন। আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণকারীদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা থাকায় সুযোগটা বেশ লোভনীয়। সবচেয়ে বেশি প্রোগ্রাম থাকে প্রযুক্তি, ব্যবসা ও আন্তর্জাতিক আইনের ওপর। সেখানে পড়ানোর জন্য পৃথিবীর নামী সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপকেরা আসেন।

এ বছরই যেমন কেবল আইনের ওপরই হয়েছে তিনটি আলাদা প্রোগ্রাম। মেধাস্বত্ব আইনবিষয়ক এক সপ্তাহব্যাপী কোর্সটিতে যেকোনো পেশাজীবী আবেদন করতে পেরেছেন। ‘আন্তর্জাতিক আইন’–এর কোর্সটির সময়কাল ছিল তিন সপ্তাহ, আর সমুদ্র আইন নিয়ে মাসব্যাপী পড়ানো হয়েছে। তবে বলে রাখা ভালো, এর কোনোটিই শিক্ষার্থীদের জন্য নয়, কেবল তরুণ পেশাজীবীদের জন্য। অর্থাৎ যাঁরা পড়াশোনা শেষ করে দুই-তিন বছর ধরে কাজ করছেন, তাঁরাই আবেদন করতে পারবেন। তবে পিএইচডির শিক্ষার্থীরাও আবেদন করতে পারেন। জুলাই-আগস্ট ধরে চলতে থাকা এই আয়োজনের প্রক্রিয়া শুরু হয় বছরের গোড়ার দিকেই। মধ্য মার্চ পর্যন্ত আবেদনের সময় থাকে। সব আবেদনের সঙ্গে দুজন শিক্ষকের ‘রিকমেন্ডেশন লেটার’ (সুপারিশ পত্র) প্রয়োজন হয়। তাই আবেদনের আগেই দুজন শিক্ষকের সঙ্গে আলাপ করে রাখতে হবে। কারণ শিক্ষকেরা নিজেদের ই–মেইল থেকে সেখানে সরাসরি চিঠি পাঠাবেন। আবেদনের শেষ তারিখের মধ্যে রিকমেন্ডেশন লেটার না পাঠানো হলে আবেদন বাতিল হয়ে যাবে।

অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে সঙ্গে বৃত্তিও পাওয়া যাবে। এ গ্রেড বৃত্তি পেলে সেটা বিমান ভাড়া থেকে শুরু করে থাকা-খাওয়া সব খরচ বহন করবে, আর বি-গ্রেড বৃত্তির আওতায় পড়বে কোর্স ফি ও বিমান ভাড়া। তবে জিয়ামেন শহরে অনেক হোস্টেল আছে, অল্প খরচে সেখানে থাকা যায়। যদিও চীনা খাবারের সঙ্গে মানাতে একটু বেগ পেতে হবে।

জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের ইংরেজি মাধ্যম নির্বাচন করে ওয়েবসাইট দেখেই আরও বিস্তারিত আবেদনপ্রক্রিয়া এবং কী কী কাগজপত্র পাঠাতে হয়, তা জানা যাবে। তবে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে, কাজের অভিজ্ঞতা বা অন্য কোনো তথ্য ভুল দেওয়া যাবে না। কারণ সেখানে যাওয়ার পর তারা আবার সেটা নিরীক্ষা করবে এবং কোনো প্রকার গরমিল পেলে বৃত্তি বাতিল করা হবে। এমনিতে নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে আবেদনকারীরা বৃত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান।

কোন সামার প্রোগ্রামে আপনি আবেদন করবেন, সেটি নির্বাচন করবেন আপনার পড়াশোনার বিষয় ও কাজের ক্ষেত্রের সঙ্গে মিল রেখে। আমাদের দেশে এমন অনেকে আছেন, যাঁদের পড়াশোনার বিষয়ের সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের মিল নেই। তাঁরাও আবেদন করতে পারেন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো প্রোগ্রামে। কারণ, কর্মক্ষেত্র কোন বিষয়ে, সেটিই বেশি প্রাধান্য পায়।

বিখ্যাত সব অধ্যাপকের ক্লাসের বাইরেও, চীনের এই সব গ্রীষ্মকালীন প্রোগ্রামের অংশগ্রহণকারীরা সে দেশের বড় বড় কারখানা ঘুরে দেখার সুযোগ পান। নানা আয়োজনের মাধ্যমে চীন তাদের সংস্কৃতি, কাজের পরিবেশ, জীবনযাত্রা—এই সবের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবে। ক্লাসরুমের বাইরের এই জ্ঞানটুকুও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

চীনের প্রোগ্রামগুলোর আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, বাইরে থেকে যাওয়া সব অংশগ্রহণকারী তাঁদের নিজ নিজ দেশ নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সুযোগ পান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নিজ দেশের পোশাক থেকে শুরু করে নাচ-গানও তুলে ধরা যায় বাইরের পৃথিবীর কাছে। একটা গ্রীষ্মকালের ছুটি এর চেয়ে ভালো আর কী হতে পারে! পরের গ্রীষ্মের জন্য এখনই চোখ রাখতে পারেন জিয়ামেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে: en.xmu.edu.cn/