সরকারি তিতুমীর কলেজে ধারণক্ষমতার চেয়েও বেশি ভর্তি

রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের জন্য একমাত্র ছাত্রাবাসটিও জরাজীর্ণ।  গতকাল দুপুরে।  ছবি: প্রথম অলো
রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্রদের জন্য একমাত্র ছাত্রাবাসটিও জরাজীর্ণ। গতকাল দুপুরে। ছবি: প্রথম অলো

তিন বছর আগে কলেজটির হিসাববিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি করা হতো পৌনে পাঁচ শ শিক্ষার্থী। এবার প্রথম বর্ষে ভর্তি করা হয়েছে ৬৪০ জন। তখন বিভাগের নিজস্ব শ্রেণিকক্ষ ছিল দুটি। এখনো তা–ই আছে। ৬৪০ জনকে ভাগ করে দুটি শাখায় সপ্তাহে তিন দিন করে ক্লাসের সময়সূচি রাখা হয়েছে। তাতেও একেটি শাখায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী। 

৪৫ মিনিটের ক্লাসে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী থাকলে সেই ক্লাসটি কতটা কার্যকর হয়—এই প্রশ্ন শিক্ষক–শিক্ষার্থী অনেকেরই। রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অবস্থিত সরকারি তিতুমীর কলেজের প্রায় প্রতিটি বিভাগেই স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ফলে শ্রেণিকক্ষে পড়াশোনা তেমন হচ্ছে না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেক সময় শিক্ষার্থীরাই ক্লাসে আসছেন না। 

কয়েকটি বিভাগের অন্তত ৮ জন শিক্ষক ও অন্তত ১৫ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকার সময় কলেজে ক্লাস খুবই কম হতো। ২০১৭ সালে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আসার পর পরীক্ষা দিতে ক্লাসের উপস্থিতি থাকতেই হবে—এমন কড়াকড়ি করা হয়। এখন তুলনামূলকভাবে ক্লাস বেশি হচ্ছে ও উপস্থিতিও বেড়েছে। এ জন্য স্নাতক (সম্মান) প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের ক্লাসে বেশির ভাগ সময়ই জায়গা হয় না। কারণ, এই দুটি বর্ষে বেশি উপস্থিতি থাকে। ওপরের শ্রেণিতে উপস্থিতি কম হয়। 

কলেজের গ্রন্থাগারটিও মানসম্মত নয়। সংখ্যায় অন্যান্য সরকারি কলেজের তুলনায় এখানে শিক্ষক ‘যথেষ্ট’ থাকলেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত এখনো বেশি। এই অনুপাত ১: ১৬৫। অথচ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গড়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ২১। কলেজটিতে ৩৫ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে কর্মরত শিক্ষক আছেন ২১২ জন। যদিও শিক্ষকের পদ তিন বছর আগের মতো ১৭৩টিই আছে। বাকিরা সংযুক্ত বা ইনসিটু হিসেবে রয়েছেন।

প্রথম আলো তিন বছর আগে ২০১৬ সালের আগস্টে কলেজটি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল। তখনো শ্রেণিকক্ষ, আবাসন–সংকট, বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করা, সেশনজটের মতো সমস্যাগুলো দেখেছিল। তবে এখন সহশিক্ষা কার্যক্রম আগের চেয়ে বেড়েছে।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. আশরাফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য এখন ১০ তলাবিশিষ্ট দুটি ভবন হচ্ছে। এগুলো হলে শ্রেণিকক্ষের সংকট অনেকটাই কেটে যাবে। এ ছাড়া ১০ তলা করে ছাত্রদের জন্য একটি ও ছাত্রীদের জন্য নতুন একটি হল নির্মাণের কাজও চলছে। 

>শ্রেণিকক্ষের অভাব ছাড়াও আছে সেশনজট ও আবাসন-সংকট
সিলেবাস শেষ না হওয়ায় প্রাইভেট পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের

১৯৬৮ সালে সরকারি কলেজ হিসেবে এটির যাত্রা শুরু। এখন মোট শিক্ষার্থী ৩৫ হাজার। উচ্চমাধ্যমিক পড়ানো হয় না। ২২টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। কিন্তু কলেজে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৪২টি। বাংলা বিভাগের একজন শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ৩৩০ জনের মতো শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। শাখা নেই। একটি মাত্র শ্রেণিকক্ষ বিভাগের নামে বরাদ্দ। এটিতে তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর বসার মতো জায়গাও নেই। আরেকটি শ্রেণিকক্ষ দুই বিভাগ মিলে ব্যবহার করে।

সেশনজট ও পরীক্ষার সমস্যা

২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র কৌশিক দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে সেশনজট বড় সমস্যা। কলেজ থেকে দেওয়া পরিচয়পত্র দেখিয়ে তিনি বললেন, এটির মেয়াদ আছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। মানে ২০১৮ সালে স্নাতক (সম্মান) শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এখনো চতুর্থ বর্ষের (স্নাতক-চূড়ান্ত) পরীক্ষাই হয়নি। 

কৌশিকের সঙ্গে কথা বলার সময়ই রসায়ন, ব্যবস্থাপনাসহ আরও কয়েকটি বিভাগে বিভিন্ন বর্ষে পড়ুয়া অন্তত আটজন ছাত্রছাত্রী সেশনজটের সমস্যার কথা বললেন। জাহিন হোসেনসহ কয়েকজন বললেন, কলেজে সিলেবাস শেষ না হওয়ায় প্রাইভেট পড়তে হয়। 

তবে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের ছাত্র জিদনি হোসেন বলেন, তাঁদের ক্লাস নিয়মিতই হয়। কিন্তু অনেক সময় কলেজে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা থাকলে ক্লাস হয় না। 

আবাসন–সংকট

ছাত্রীদের জন্য দুটি ছাত্রীনিবাস আছ। এর মধ্যে সুফিয়া কামাল ছাত্রীনিবাসটি কলেজের মূল ভবনের পাশেই অবস্থিত। এই ছাত্রীনিবাসে প্রায় দুই শ আসন আছে। এই ছাত্রীনিবাসের একজন ছাত্রী বললেন, তাঁদের কক্ষে চারটি বিছানায় থাকেন সাতজন। ছাত্রীদের জন্য সিরাজ ছাত্রীনিবাসটি বনানীতে অবস্থিত। 

ছাত্রদের জন্য তিনতলাবিশিষ্ট আক্কাছুর রহমান আঁখি ছাত্রাবাসটির অবস্থাও খুব নাজুক। ২১৬ নম্বর কক্ষের এক ছাত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, তাঁদের কক্ষে চারটি বিছানা আছে। কিন্তু থাকেন ১৪ জন। তিনি নিজেও মেঝেতে থাকেন। তাঁর ভাষ্য, হলে পড়াশোনার পরিবেশ নেই, আলাদা পড়ার কক্ষও নেই। আবার হলে খাবারের ব্যবস্থাও বন্ধ। ফলে বাইরে থেকে খেতে হচ্ছে।