ঢাবির রোকেয়া হলে ২১ লাখ টাকা নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ

সংবাদ সম্মেলন করে হলে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন রোকেয়া হলের কয়েকজন ছাত্রী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা-কর্মীও উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলন করে হলে নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ করেছেন রোকেয়া হলের কয়েকজন ছাত্রী। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা-কর্মীও উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ০৩ সেপ্টেম্বর। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও হল শাখা ছাত্রলীগের দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে নিয়োগ-বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন হলের কয়েকজন ছাত্রী। হলে নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ কয়েকটি পদে নিয়োগ দিতে তিন ব্যক্তির কাছ থেকে ২১ লাখ টাকা নিয়েছেন তাঁরা, এমন অভিযোগ করেছেন ছাত্রীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আজ মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন রোকেয়া হলের প্রায় ১৫ জন ছাত্রী। ছাত্রীদের অভিযোগের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফেডারেশনের কয়েকজন নেতা-কর্মীও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২৫ জুলাই রোকেয়া হলে চারটি পদে কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রাধ্যক্ষ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা। বিজ্ঞপ্তিতে অফিস সহায়ক পদে ১ জন, বাগানের মালি পদে ১ জন, নিরাপত্তা প্রহরী পদে ৩ জন ও পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৩ জনকে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। ৩১ জুলাই ছিল আবেদনের শেষ দিন। ১ সেপ্টেম্বর এসব পদে আবেদনকারীদের মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছাত্রীদের অভিযোগ, অফিস সহায়ক পদে হলের এক কর্মচারীর ছেলেকে এবং বাগানের এক মালির ছেলেকে মালি পদে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে তাঁদের কাছ থেকে যথাক্রমে ৮ ও ৫ লাখ করে টাকা নিয়েছেন হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান ও জিএস সায়মা প্রমি। আর নিরাপত্তা প্রহরী পদে নিয়োগ দিতে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৮ লাখ টাকা নিয়েছেন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি লিপি আক্তার, সাধারণ সম্পাদক শ্রাবণী ইসলাম ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসম্পাদক ইশাত কাশফিয়া। এ সময় হল সংসদের সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) ফাল্গুনী দাসের সঙ্গে হলের এক কর্মচারীর কথোপকথনের রেকর্ডও সাংবাদিকের কাছে দেন অভিযোগকারী ছাত্রীরা। এ ছাড়া হল প্রাধ্যক্ষের তাৎক্ষণিক অপসারণ ও হল সংসদ বাতিল ঘোষণা করার দাবি জানান অভিযোগকারী ছাত্রীরা।

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগকারী ছাত্রীদের মুখপাত্র হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী শ্রবণা শফিক বলেন, এসব তথ্য গত ৩১ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক একটি ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশ করেন তিনি। ফেসবুকে এসব তথ্য প্রকাশ করায় গতকাল সোমবার তাঁকে চিঠি দিয়ে তলব করেন প্রাধ্যক্ষ জিনাত হুদা। চিঠিতে আজ মঙ্গলবার দুপুরে তাঁকে ওই অভিযোগ তদন্তে হল প্রশাসনের করা কমিটির কাছে বক্তব্য জানানোর অনুরোধ করা হয়।

এ সময় শ্রবণা শফিক অভিযোগ করে বলেন, আজ দুপুরে প্রাধ্যক্ষের কার্যালয়ে গেলে হল শাখা ছাত্রলীগের দুই শীর্ষ নেত্রী ও ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলের ভিপি ও জিএস প্রাধ্যক্ষের সামনে তাঁকে লাঞ্ছিত করেন। এ সময় প্রাধ্যক্ষও ছাত্রলীগ নেত্রীদের পক্ষে অবস্থান নেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হল সংসদের ভিপি ইসরাত জাহান এগুলোকে ভিত্তিহীন অভিযোগ বলে দাবি করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ব্যক্তিগত রেষারেষির জেরেই শ্রবণা শফিক তাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন। জিএস সায়মা প্রমি ও এজিএস ফাল্গুনী দাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ ও হল সংসদের সভাপতি অধ্যাপক জিনাত হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ তদন্তে আমরা পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি করেছি। কমিটির পক্ষ থেকে অভিযোগকারী শ্রবণা শফিকসহ অভিযোগ ওঠা সবাইকে ডাকা হয়েছিল। অভিযোগের পক্ষে শ্রবণা কোনো দালিলিক প্রমাণ দিতে পারেননি। তাঁকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, এটিও সত্য নয়।’

এই অভিযোগের বিষয়ে ডাকসুর এজিএস ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেকোনো ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ডাকসু ও ছাত্রলীগের জিরো টলারেন্স আছে। রোকেয়া হলে নিয়োগ-বাণিজ্যের বিষয়টির প্রমাণ পাওয়া গেলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’