পুরোনো সংকটের আবর্তে শতবর্ষী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজ।  ফাইল ছবি
খুলনার সরকারি ব্রজলাল কলেজ। ফাইল ছবি

খুলনার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি ব্রজলাল কলেজ, যা সারা দেশে বিএল কলেজ নামে পরিচিত। জরাজীর্ণ ল্যাবে উপকরণ–স্বল্পতা, শ্রেণিকক্ষের সংকট, শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকস্বল্পতা, আবাসনসংকট—এসব সমস্যা নিয়েই চলছে ১১৭ বছরের পুরোনো কলেজটি।

কলেজটিতে এখন উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি ২১টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) এবং ১৮টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। আছে প্রাইভেটে স্নাতক পাস কোর্স। সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩ হাজার। কলেজে শিক্ষকের মোট পদ ১৯৭টি। শিক্ষক আছেন ১৭২ জন। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সব পদে শিক্ষক থাকলেও প্রভাষক পদের ৭৩টির মধ্যে ১৭টি খালি। আর প্রদর্শক ও সহকারী গ্রন্থাগারিকের ১১টি পদের ৮টিই খালি।

শিক্ষকেরা বলছেন, বড় বিভাগগুলোর জন্য ১২ জন করে শিক্ষকের পদ আছে। বেশির ভাগ বিভাগে সেই পরিমাণ শিক্ষক আছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় নিলে এসব বিভাগে অন্তত ১৮ জন করে শিক্ষক প্রয়োজন। এ ছাড়া মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, সমাজকর্ম, ইসলাম শিক্ষা, মার্কেটিং ও ফিন্যান্স বিভাগে শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে। 

সমাজকর্ম, সমাজবিজ্ঞান, বাংলা, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগে আছে শ্রেণিকক্ষের সংকট। কলেজে অনেক বিভাগে পরীক্ষা চলাকালে ক্লাস নেওয়া যায় না। কলেজ কর্তৃপক্ষই বলছে, প্রত্যেক বিভাগেরই আরও এক–দুটি করে শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন।

২০১৬ সালে বিএল কলেজের নানা সমস্যা নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এর প্রায় তিন বছর পর গত বুধবার কলেজটিতে গিয়ে দেখা যায়, এই তিন বছরে পরও আগের সমস্যাগুলো রয়েই গেছে। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। অবশ্য সম্প্রতি শিক্ষাঙ্গনটির পরিবেশ কিছুটা উন্নত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন একাধিক শিক্ষার্থী।

সরেজমিনে দেখা যায়, ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য যে গ্রন্থাগার, সেটি প্রয়োজনের তুলনায় বেশ ছোট। গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে একসঙ্গে মাত্র ৫০ জন বসে পড়ার সুযোগ পান। সেটিও আবার মাসে অন্তত দুদিন বন্ধ রাখতে হয় অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। কারণ, কলেজের একমাত্র মিলনায়তনটি দীর্ঘদিন ধরে পরিত্যক্ত। প্রতি মাসে একজন বাঙালি মনীষী নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। সে অনুষ্ঠান হয় গ্রন্থাগারের পাঠকক্ষে। এ জন্য অনুষ্ঠানের আগের দিন ও অনুষ্ঠানের দিন পাঠকক্ষে পড়ালেখা করার সুযোগ থাকে না।

কলেজের বিজ্ঞান ভবন-২–এ উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ল্যাব। ভবনটি জরাজীর্ণ। ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ছে। জানালাগুলোও বেশির ভাগ ভাঙা। আছে প্রয়োজনীয় উপকরণের সংকট। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রদর্শক পদের দুটিই শূন্য। প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাওসিফুর রহমান বলেন, তাঁরা ভয়ে ভয়ে থাকেন। কখন পলেস্তারা খসে মাথায় পড়ে। 

শতবর্ষী এই কলেজে শিক্ষার্থীদের আবাসনব্যবস্থা আছে না থাকার মতোই। ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীর বিপরীতে মোট সাতটি ছাত্রাবাসে ৫৭৭ জন থাকার ব্যবস্থা আছে। এর মধ্যে পাঁচটি ছাত্রাবাস ছেলেদের জন্য। তিনটি টিন ও টালির একতলা ভবন। অন্য দুটির মধ্যে একটি দ্বিতল ও অন্যটি চারতলা। এগুলোর মধ্যে সুবোধ চন্দ্র হল, কবি নজরুল ইসলাম ও ড. জোহা হল একেবারে জরাজীর্ণ। প্রথম দেখায় মনে হবে পরিত্যক্ত কোনো ভবন। সেখানেই নানা সমস্যা সঙ্গী করে থাকছেন ছাত্ররা।

সুবোধ চন্দ্র ছাত্রাবাসে থাকেন অশীত কুমার। তিনি বলেন, ছাত্রাবাসটি কিছুদিন আগে সংস্কার করা হয়েছে। তবে এখন অনেক কক্ষে বৃষ্টির পানি পড়ে। টয়লেটগুলোর অবস্থা ভালো না। পানির সমস্যা হয়। আছে বহিরাগতদের উৎপাত। 

কলেজের অধ্যক্ষ কে এম আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, আন্তর্জাতিক মান ধরলে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক কম। ১৫০টি নতুন পদ সৃজনের আবেদন করা হয়েছে। বড় বিভাগগুলোতে আরও ছয়জন করে শিক্ষক দরকার। প্রত্যেক বিভাগে আরও এক-দুটি করে শ্রেণিকক্ষ প্রয়োজন। বিজ্ঞান ভবন ২ ও ১ এবং কলা ভবন অনেকটা জরাজীর্ণ। হোস্টেলগুলো নিয়েও সমস্যা আছে। দুটি হোস্টেলে সংস্কারকাজ হয়েছে। আরও দুটি সংস্কারে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। মেয়েদের জন্য আরেকটি হোস্টেল নির্মাণ করা হচ্ছে।


● আগামী পর্ব: সরকারি বাঙলা কলেজ