তফসিলের আগেই এলাকা ছেয়ে গেছে পোস্টারে

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দেয়াল। গতকাল দুপুরে বেইলি রোডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পাশে।  ছবি : সাইফুল ইসলাম
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার দেয়াল। গতকাল দুপুরে বেইলি রোডে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির পাশে। ছবি : সাইফুল ইসলাম

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের তফসিলই এখনো ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু এর আগেই পোস্টারে ছেয়ে গেছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এসব রঙিন পোস্টারে নানাভাবে জানান দিচ্ছেন নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার কথা।

যদিও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটিসংক্রান্ত প্রবিধান মালা অনুযায়ী, এই নির্বাচনী প্রচারে পোস্টার ব্যবহার করা বেআইনি। এ ছাড়া দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী নির্ধারিত স্থান ছাড়া পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ।

জানা গেছে, এ নির্বাচন সামনে রেখে এক মাসের বেশি সময় ধরে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার চালাচ্ছেন। এসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ, আইনজীবী, ব্যবসায়ী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এ নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যেও ব্যাপক কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক অভিভাবক প্রশ্ন তুলেছেন—কি এমন ‘সুবিধা’ আছে যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটিতে ঢুকতে সম্ভাব্য প্রার্থীরা এভাবে ‘মরিয়া’ হয়ে তফসিল ঘোষণার আগেই মাঠে নেমেছেন? অভিভাবকদের কেউ কেউ বলছেন, পরিচালনা কমিটিতে থাকলে ‘নানা সুবিধা’ পাওয়া যায়। অতীতেও একবার এ প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল। তখন প্রয়াত এক ব্যাংক শ্রমিকনেতা প্রচার ও ভোটারদের আনা–নেওয়ার জন্য অসংখ্য গাড়ি ব্যবহার করে আলোচনার খোরাক জুগিয়েছিলেন।

সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তদন্তে প্রমাণিত হয় যে ভর্তির নীতিমালা লঙ্ঘন করে চলতি ২০১৯ সালে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণিতে আসনসংখ্যার চেয়েও ৪৪৩ জন অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে। এ জন্য তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশও পাঠিয়েছে মাউশি। অনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠানটিতে অতিরিক্ত ছাত্রী ভর্তি করা হয়েছে বলে মনে করেন মাউশির একাধিক কর্মকর্তা। এ ছাড়া বিদায়ী পরিচালনা কমিটির মেয়াদের একেবারে শেষ সময়ে কলেজটির অধ্যক্ষ নিয়োগের প্রক্রিয়া হয়েছিল। এ জন্য একজনকে বাছাইও করা হয়েছিল। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই নিয়োগপ্রক্রিয়া বাতিল করেছিল। আর এসব কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বিদায়ী কমিটির কয়েকজনের নামে। 

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত পরিচালনার কমিটির মেয়াদ দুই বছর। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের নিয়মিত পরিচালনা কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২ মে মাসে। এরপর ২৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খানকে সভাপতি করে চার সদস্যের অস্থায়ী পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। এখন নিয়মিত কমিটি গঠনের জন্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নির্বাচন করার জন্য আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রধান গতকাল বুধবারই ঢাকার জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। 

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও অস্থায়ী কমিটির সদস্যসচিব ফেরদৌসি বেগম গতকাল প্রথম আলোকে প্রস্তাব পাঠানোর কথা জানান। তিনি বলেন, এখন জেলা প্রশাসক প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগসহ নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবেন। ইতিমধ্যে ভোটার তালিকা করা হয়েছে। মোট ভোটার প্রায় ২৫ হাজার। জানা গেছে, ১১ সদস্যের নিয়মিত পরিচালনা কমিটি হলেও মূলত পাঁচজন অভিভাবক সদস্য (একটি পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত) এবং তিনটি শিক্ষক প্রতিনিধি (একটি পদ নারী শিক্ষকের জন্য সংরক্ষিত) পদেই নির্বাচন হয়ে থাকে। এবারও তাই হচ্ছে। এখন যাঁরা জোরেশোরে প্রচারণায় নেমেছেন, তাঁদের সবাই অভিভাবক সদস্য পদে প্রার্থী। 

 গতকাল বুধবার ও আগের দিন মঙ্গলবার সরেজমিনে বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর, বেইলি রোড, মগবাজার, মালিবাগ, সিদ্ধেশ্বরী, রামপুরা, ইস্কাটনসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীদের অসংখ্য সচিত্র পোস্টার দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি পোস্টার ও ফেস্টুন দেখা গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাস বেইলি রোড এলাকায়। সেখানে গতকাল দেখা গেছে, দেয়ালগুলো ভরে গেছে পোস্টারে। বেশির ভাগ পোস্টার রঙিন। মগবাজার থেকে মালিবাগ পর্যন্ত উড়ালসেতুর পিলারগুলোও ছেয়ে গেছে সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টারে। বর্তমানে বেইলি রোড ছাড়াও বসুন্ধরা, আজিমপুর ও ধানমন্ডিতে তিনটি আলাদা শাখা রয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের।

সম্ভাব্য প্রার্থীদের একজন সিদ্দিকী নাসির উদ্দিন। বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে তাঁরও পোস্টার। প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম বন্ধ করার লক্ষ্যে প্রার্থী হয়েছেন বলে তিনি জানালেন। পোস্টার টানানোর বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি মনে করেন, প্রচারে পোস্টার টানানো উচিত নয়। কিন্তু সমর্থকদের অনুরোধে কিছু পোস্টার লাগিয়েছেন। তাঁর মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের উচিত এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা।

তফসিলের আগেই পোস্টারে ছেয়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির অস্থায়ী পরিচালনা কমিটির সভাপতি নাজমুল হক খান প্রথম আলোকে বলেন, তফসিল হলে এ বিষয়টি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে জানানো হবে। তখন তিনি নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।