ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ কথার কথা

সময় পেলেই প্রকৃতির কাছে ছুটে যান মুশফিকা রহমান
সময় পেলেই প্রকৃতির কাছে ছুটে যান মুশফিকা রহমান

তাঁর নাম মুশফিকা রহমান। ডাকনাম ‘কথা’ বলেই হয়তো সপ্রতিভভাবে বলে গেলেন তাঁর নানা অর্জন, বেড়ে ওঠার গল্প। বাবা সরকারি চাকরিজীবী। সেই সুবাদেই প্লে থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় সাতটা স্কুল বদলাতে হয়েছিল। ভিন্ন স্কুল, ভিন্ন ভিন্ন বন্ধু, ভিন্ন জায়গায় নিজেকে মানিয়ে নেওয়া রপ্ত হয়ে যায় ছোটবেলাতেই। সবশেষে পঞ্চম শ্রেণিতে এসে থিতু হন ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। এখান থেকেই জিপিএ–৫ পেয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের সমাপ্তি।

টেলিভিশনে মুশফিকার প্রিয় অনুষ্ঠান ছিল ডিসকভারি চ্যানেলের গোল্ড রাশ অব আলাস্কা। মুগ্ধ চোখে তিনি দেখতেন, আলাস্কা দ্বীপ ও পৃথিবীর নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ায় একদল স্বর্ণসন্ধানী মানুষ। মুশফিকারও এমন অভিযাত্রিক হওয়ার ইচ্ছে ছিল। উচ্চমাধ্যমিকের পর সুযোগ পান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিষয় নির্বাচনে সবাই যখন চেনা নামগুলোতে টিক দিয়েছেন, মুশফিকা বেছে নিয়েছিলেন একটা ব্যতিক্রম বিষয়। হ্যাঁ, জীবাশ্ম জ্বালানি ও খনি খনন বিষয়ের চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন তিনি। শুনে অনেকে অবাক হতে পারেন। তাই শুরুতেই মুশফিকার শৈশবের আগ্রহের কথা বলে নেওয়া।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই জায়গা করে নেন ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক সংগঠন জয়োধ্বনিতে। রক্তাক্ত প্রান্তর নাটকের জরিনা চরিত্র দিয়ে শুরু। এরপর উপস্থাপনা, অভিনয় ও মূকাভিনয়ের পাশাপাশি সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্যের দায়িত্বও পালন করেন। নিজের ও নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে সমাজের নানা অসংগতিগুলো তুলে ধরেছেন। আবৃত্তি, মূকাভিনয় ও নাটকের মধ্য দিয়েই দেখিয়েছেন মাদকাসক্তির কুফল, যৌতুক, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন ও পরিবেশদূষণের মতো নানা বিষয়। মুশফিকার পরিচালনায় এমন একটি নাটকই ২০১৭ সালে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় নাট্য উৎসবে প্রথম স্থান অধিকার করে। 

প্রথম আলো আয়োজিত চুয়েট আন্তবিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক উৎসবে ২০১৬ সালে জয়োধ্বনি প্রথম রানারআপ হয়। তখন থেকেই ঠিক করেন, যেভাবেই হোক, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়কে চ্যাম্পিয়ন তিনি করবেনই। তাঁরই নেতৃত্বে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে পরপর দুইবার চুয়েট অপ্রতিরোধ্যভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়। এর মধ্য দিয়েই জয়োধ্বনির সভাপতি পদে নির্বাচিত হন কথা। মুশফিকা জানালেন, তাঁর আগে আর কোনো নারী শিক্ষার্থী এই পদে দায়িত্ব পাননি। 

সংগঠক হিসেবে মুশফিকার অভিজ্ঞতার ঝুড়িটা বেশ ভারী। গ্রিন ফর পিস নামক সংগঠনের সঙ্গে থেকে পরিবেশরক্ষার সব রকম কাজেই ছিলেন সবার আগে। যখন মনে হয় জীবনটা একঘেয়ে হয়ে গেছে, তখনই ছুটে যান প্রকৃতির কাছে। সাগর, ঝরনা, পাহাড় যেন চুম্বকের মতোই টানে তাঁকে। এ ছাড়া অবসরে সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। ব্যাডমিন্টন খেলাতেও আছে তুমুল আগ্রহ।

সাংগঠনিক কাজ আর পড়াশোনা কি পাশাপাশি সামলানো যায়? এমন প্রশ্নে বললেন, ‘অনেকেরই ধারণা, সাংগঠনিক কাজ করলে পড়াশোনা হয় না। আমি কিন্তু পরীক্ষার রেজাল্ট সব সময় ভালো রাখার চেষ্টা করেছি। কারণ আমি মনে করি, মানুষ পারে না এমন কিছু নেই। প্রকৌশলে কঠিন পড়ালেখায় যখন দম নেওয়ার ফুরসত পাই না, তখন সাংগঠনিক কাজগুলো আমাদের উদ্যম দেয় নতুনভাবে কাজ করার।’ জানিয়ে রাখি, চতুর্থ বর্ষের শেষ পর্যায়ে নিজের ব্যাচে তৃতীয় অবস্থানটি রয়েছে মুশফিকা রহমানের দখলে।

ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ নিয়ে লিখেছেন সামিয়া শারমিন