এক অন্য গবেষক

বিদেশের মাটিতে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তন্ময় কুমার ঘোষ
বিদেশের মাটিতে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তন্ময় কুমার ঘোষ

তন্ময় কুমার ঘোষের পড়ার বিষয়টা আগে বলি—টেকসই কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এখন একই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর করছেন।

এসিআই অ্যাগ্রি বিজনেস, ক্যাটালিস্ট অ্যান্ড কনসিগ্লিয়েরি প্রাইভেট লিমিটেড আয়োজিত ‘ফিউচার অ্যাগ্রি এন্ট্রাপ্রেনার কনটেস্ট ২০১৫’–তে সারা দেশের মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে তন্ময় প্রথম জানান দিয়েছিলেন, ক্যাম্পাস থেকে শুধু ‘ডিগ্রি’ ঝোলায় ভরে বিদায় নিতে তিনি রাজি নন। এরপর ২০১৬ সালে বেটার স্টোরিস লিমিটেডের সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে ইনোভেশন ফান্ড পেয়ে ‘ইকোফুয়েল’ নামের একটি প্রকল্প শুরু করেন। প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, দেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি তৈরি করে পরিবেশদূষণ রোধে সচেষ্ট হওয়া এবং বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবেই বোধ হয় তন্ময়ের সময়টা বেশি কেটে যায়। ওই যে, নিত্যনতুন বিষয়ের প্রতি আগ্রহ! তিনি জাত্রোফা ও করচের তেল থেকে বায়োডিজেল প্রস্তুত করেছেন। এদিকে শৈবাল থেকে জ্বালানি উৎপাদনের জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

তন্ময়ের বাকি অর্জনগুলোর কথা বলতে গেলেও একটা লম্বা দম নিতে হবে। জিতেছেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার আয়োজিত ‘বিওয়াইএলসি ইয়ুথ লিডারশিপ প্রাইজ ২০১৬’। তাঁর প্রকল্প ‘একুয়ালাইন’ পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিভাগ (ডিএফআইডি) থেকে ১০ হাজার ডলারের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। একুয়ালাইন বিষয়টা কী? তন্ময় বললেন, এর মূল উদ্দেশ্য ছিল মৎস্যজাত বর্জ্য থেকে মূল্যবান প্রোডাক্ট তৈরি করে তা বাজারে বিক্রি করা এবং লাভের অংশ মাছবিক্রেতার মধ্যে বণ্টন করে তাঁদের মাসিক আয় বৃদ্ধি করা। ফলে মৎস্যজাত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার চিরস্থায়ী সমাধান হবে এবং তার প্রভাব বাংলাদেশের জিডিপিতেও পড়বে, যদি প্রকল্পটি সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। কেননা, দেশে মাছের খাবার তৈরি করার ৫০-৫৫ শতাংশ উপাদান এখনো আমদানি করা হয়।

বিদেশের মাটিতে একাধিকবার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তন্ময় কুমার ঘোষ। অংশ নেন ভিয়েতনামে দুই সপ্তাহব্যাপী আয়োজিত সিনজেনটা-ইউএসএআইডি কানেকশন প্রোগ্রাম ২০১৭–তে। যাতে অংশ নেন নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালে গিয়েছিলেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককে অনুষ্ঠিত ‘টেক ফর ফারমার্স এশিয়া চ্যালেঞ্জ ২.০’ নামের একটি সম্মেলনে। সেখানে তিনি ‘ইমার্জিং ইয়াং অ্যাগ্রিকালচারাল লিডার’ নামক প্যানেলে একজন প্যানেলিস্ট হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নিতে তন্ময় গিয়েছেন মালয়েশিয়া, নেদারল্যান্ডস ও ভারতে। স্নাতকোত্তরে সামুদ্রিক শৈবালে চাষ ও এর সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তিনি ফেলোশিপও অর্জন করেছেন। 

ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ তন্ময়, শিক্ষার্থীদের গঠনমূলক কাজে উৎসাহিত করতে এবং তাঁদের প্রতিভার পূর্ণ বিকাশ ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে তুলেছেন ক্যারিয়ার ক্লাব (বিএইউসিসি)। সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজন করার পাশাপাশি, নেদারল্যান্ডস সরকারের একটি প্রকল্পের সহায়তায় বিএইউসিসি দুই বছর ধরে আয়োজন করছে ‘ট্রেইলব্লেজার’ নামের একটি ব্যবসা পরিকল্পনা প্রতিযোগিতা।

তরুণ এই গবেষককে ক্যাম্পাসের গুরুগম্ভীর ‘ভালো ছাত্র’দের তালিকায় ফেলে দিয়ে ভুল করবেন। স্ট্রিট ড্যান্স ও ব্রেক ড্যান্সেও তিনি পারদর্শী! আর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? বললেন, ‘উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে যেতে চাই। তারপর নিজের জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধি করে সমাজের কল্যাণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করব।’ 

ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ নিয়ে লিখেছেন সামিয়া শারমিন