জাবির 'উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি' নিয়ে ৩ পক্ষের মিছিল-সমাবেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগকে কেন্দ্র করে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ কর্মবিরতি, পদযাত্রা ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। প্রায় একই ধরনের দাবিতে শিক্ষার্থীদের একটি অংশও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ‘টাকা লেনদেনের বিষয়ে মিথ্যাচার’ করছে, এমন অভিযোগ করে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সংগঠনটির বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতা-কর্মীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ১৪০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। এই প্রকল্পের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। তবে ওই মহাপরিকল্পনাকে ‘অপরিকল্পিত’ দাবি করে আন্দোলন করে আসছিল শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। এর মধ্যে ওই প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার জন্য ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। পরের দিন থেকে টাকা লেনদেনের অভিযোগের বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

এসব দাবিতে আজ রোববার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের একাংশ। বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের সামনে থেকে পুরোনো প্রশাসনিক ভবন পর্যন্ত পদযাত্রা করেন তাঁরা। পদযাত্রা শেষে সেখানে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন শিক্ষকেরা।

সমাবেশে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘মহাপরিকল্পনায় দুর্নীতির সঙ্গে এখন যোগ হয়েছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসী ও আধিপত্য যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে উদ্ভূত সমস্যার সমাধান হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও চ্যান্সেলর কার্যালয়ের অবহিত থাকার কথা। এসব নিয়ে সারা দেশে এখন আলোচনা হচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জনগণের টাকায় চলে, সে ক্ষেত্রে এখানে কী হচ্ছে সেটা জানার অধিকার দেশের সাধারণ মানুষেরও আছে।’

নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পরিস্থিতি আরও লেজেগোবরে হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য (রাষ্ট্রপতি) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে সম্পৃক্ত করে অনিয়ম ও আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে, তা তদন্ত করতে পারে।’

সমাবেশে অন্য শিক্ষকদের মধ্যে বক্তব্য দেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের মির্জা তাসলিমা সুলতানা, বাংলা বিভাগের শামীমা সুলতানা, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের খবির উদ্দিন প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বাংলা বিভাগের রেজাউল করিম তালুকদার।

একই দাবিতে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাংশ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ঘুরে পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমাবেশে সংহতি জানিয়ে যোগ দেয়।

এদিকে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়া হয়েছে এমন ‘কাল্পনিক তথ্যের’ মাধ্যমে একটি মহল বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অস্থিতিশীল’ করছে দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শাখা ছাত্রলীগ। মিছিল শেষে ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে থাকা অবস্থায় উন্নয়নকাজকে কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।’