বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়: দুই অনুষদের শিক্ষার্থীদের চার দাবি, ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমেছেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি

চারটি পৃথক দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি অনুষদের দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত রেখেছেন। গত বুধবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা। কাল রোববারও এই বর্জন কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, তাঁদের দাবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়, এ জন্য বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের নজরে আসতে হবে। এ কারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তাঁরা।

বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে কৃষি প্রকৌশল ক্যাডার পদ সৃষ্টি ও কৃষি অধিদপ্তরে কৃষিভিত্তিক অন্যান্য বিষয়ের মতো কৃষি প্রকৌশলীদের জন্য আলাদা শাখা চালুর দাবিতে আন্দোলন করছেন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচিও পালন করছেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে এ অনুষদের শিক্ষকেরাও একাত্মতা ঘোষণা করেছেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়ুয়া সব শিক্ষার্থী বিসিএসে টেকনিক্যাল ক্যাডারের সুযোগ পেলেও শুধু কৃষি প্রকৌশলীরা এ সুযোগ পাচ্ছেন না। এটা একেবারেই অমানবিক। কারণ, প্রকৌশল ও কৃষির যান্ত্রিকীকরণ ছাড়া সামগ্রিক কৃষির উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই পেশাগত সুযোগ না থাকায় দেশের কৃষিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগছে না বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা।

দাবি আদায় আন্দোলনের মুখপাত্র শিক্ষার্থী ইমরান সিদ্দিকী বলেন, ‘ক্যাডার সার্ভিস ও কৃষি অধিদপ্তরে কৃষি প্রকৌশলীদের আলাদা শাখা সৃষ্টি এখন সময়ের দাবি। কৃষিকে এগিয়ে নিতে হলে প্রকৌশলীদের বাদ দেওয়া যাবে না। চাকরির ক্ষেত্রে সন্তোষজনক সুযোগ না পাওয়ায় অন্য পেশায় ঝুঁকে পড়ছেন এই প্রকৌশলীরা। আমরা কৃষি মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’ কাল রোববারও ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কর্মসূচি থাকছে বলে জানান তিনি।

এদিকে দুই দফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে তাঁরাও গত বুধবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রেখেছেন। সম্প্রতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রস্তাবিত নতুন অর্গানোগ্রাম থেকে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারে প্রাণিসম্পদ সম্প্রসারিত কর্মকর্তা (এলইও) পদটি অর্থ মন্ত্রণালয় বাদ দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। পদটি পুনর্বহাল এবং অধিদপ্তরে ডাইরেক্টর পৃথক্‌করণের দাবিতে গতকাল শনিবার এই অনুষদের ছাত্র সমিতির পক্ষ থেকে উপাচার্যকে একটি স্মারকলিপিও প্রদান করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানান, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে পদটির গুরুত্ব উপলব্ধি করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় নতুন অর্গানোগ্রামে এ পদের জন্য সুপারিশ করে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে অর্থ মন্ত্রণালয় অর্গানোগ্রাম থেকে সুপারিশ করা এই পদ উঠিয়ে দিয়েছে, যা পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্রমূলক। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রাণিসম্পদ ধ্বংসের দিকে ধাবিত হবে বলে তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

পশুপালন অনুষদের ছাত্র সমিতির ভিপি মো. ইশতিয়াক আহম্মদ বলেন, ‘পশুপালন ও পশুচিকিৎসা ভিন্ন বিষয় হওয়ায় আমরা আলাদা দুটি অধিদপ্তর চাই। সেটা না হলে সামগ্রিক প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন সম্ভব হবে না। পশুপালন গ্র্যাজুয়েটরা এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যথাযথ পদক্ষেপ কামনা করছি।’ কাল রোববার দাবি আদায়ে পশুপালন অনুষদের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে আজ শনিবার উপাচার্য লুৎফুল হাসানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।