'মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি'

ছোটবেলা থেকেই নাচ ও ছবি আঁকায় আগ্রহ ছিল গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের ছাত্রী ফারজানা মনামীর। নৃত্যাঞ্চল আয়োজিত জাতীয় প্রতিযোগিতায় জিতে নিয়েছিলেন প্রথম পুরস্কার। সে সময়েই যুক্ত হন বাংলাদেশ গার্ল গাইডস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে। বিভিন্ন দিবস উদ্​যাপন, সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি ও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন এই সংস্থার মাধ্যমে। জাপানে অনুষ্ঠিত ‘৯০তম আন্তর্জাতিক টুগাখুশি ক্যাম্প’, শ্রীলঙ্কার ‘দ্বিতীয় গ্লোবাল ইয়াং লিডারস পিস ক্যাম্প’সহ বিভিন্ন আয়োজনে ভিনদেশে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব গার্ল গাইডস অ্যান্ড গার্ল স্কাউট তাদের একটি বিশেষ ইউনিট ‘ইয়ং উইমেন স্পিকারস পুল’–এ কাজ করার জন্য ২০১৬ সালে আমন্ত্রণ জানায় তাঁকে। প্রায় ৭৩টি দেশের তিন শতাধিক প্রার্থীর মধ্যে মাত্র ২৬ জনকে বাছাই করা হয়েছিল। আমেরিকা, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের পাশে বাংলাদেশের নামটি যুক্ত করেন মনামী। বিভিন্ন কাজের পুরস্কার বা সম্মাননা হিসেবে দেশ-বিদেশে পেয়েছেন ৪০টির বেশি ব্যাজ। 

শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রমে পারদর্শিতার জন্য ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ‘বেস্ট গার্ল অব দ্য ইয়ার’ হিসেবে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন। ২০১৬ সালে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় সেরা মেধাবীর পুরস্কার পেয়েছিলেন ভাষা ও সাহিত্যে। মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিতর্ক করার অভিজ্ঞতা ছিল না, তবু সাহস করে নিজের মেডিকেল কলেজের হয়ে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন তিনি। সারা দেশের ৩৬টি মেডিকেলের মধ্যে মনামী ও তাঁর দলের অবস্থান ছিল পঞ্চম। 

একসময় বই পড়ার খুব নেশা ছিল ফারজানা মনামীর। এখন মেডিকেলের মোটা মোটা বইয়ের নিচে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের বইগুলো একরকম চাপাই পড়ে আছে। তবু প্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের উক্তি ধরেই মনামী বললেন, ‘“আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি”—কথাটি আমার খুব প্রিয়। সময় ফুরিয়ে গেলে একদিন চলে যেতে হবে, থেকে যাবে আমার কাজ। তাই যদি একজন মানুষের এক মুহূর্তের জন্যও স্বস্তির কারণ হয়ে থাকতে পারি, পৃথিবীকে যদি আরেকটু ভালো অবস্থায় রেখে যেতে পারি, তাহলেই হয়তো এই মানবজনম সার্থক হবে।’ 

সামিয়া শারমিন