শিক্ষকসংকট, শিক্ষার্থী উপস্থিতিও কম

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ

১২০ বছরের পুরোনো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজে পরিসংখ্যান বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৫৩৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। কিন্তু শিক্ষক মাত্র তিনজন। সংকট মোকাবিলায় খণ্ডকালীন আরও দুজন শিক্ষক দিয়ে টেনেটুনে চলছে ওই বিভাগের পাঠদান।

পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় ক্লাস চালাতে খুবই কষ্ট হচ্ছে।

২০১২ সালে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং এবং মার্কেটিং বিভাগে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালু হয়। কিন্তু এখনো শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে হিসাববিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষকেরা ওই দুই বিভাগে ক্লাস নিয়ে বিভাগটি চালু রেখেছেন। 

কলেজটির বেশির ভাগ বিভাগেই শিক্ষকসংকট রয়েছে। সব মিলিয়ে কলেজে শিক্ষকের পদ ১৫৬টি। শিক্ষকসংকটের কারণে কোনো কোনো বিভাগে নিয়মিত ক্লাস হয় না। কলেজের আবাসন সমস্যাও প্রকট। জায়গা থাকা সত্ত্বেও নতুন ছাত্রাবাস হচ্ছে না। পরিবহনও অপ্রতুল। তবে কলেজের সার্বিক ফল তুলনামূলক ভালো। ২০১৬ সালের নভেম্বরে কলেজটি নিয়ে প্রথম আলো প্রতিবেদন করেছিল। তখনো সমস্যা প্রায় একই ধরনের ছিল।

কলেজের অধ্যক্ষ মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, এ কলেজে শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে না বছরের পর বছর। পদ সৃষ্টি ও আবাসনসংকট দূর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেছেন তাঁরা। বর্তমানে আরও ২২ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে কোনোরকমে ক্লাস চালানো হচ্ছে। ছাত্রাবাসের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা আছে। বর্তমানে নগরের দক্ষিণ চর্থা এলাকায় পাঁচ তলাবিশিষ্ট ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হচ্ছে। এটিতে উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রীরা থাকতে পারবে। তখন কিছুটা হলেও সংকট দূর হবে। শিক্ষক ও আবাসনসংকটই এখানকার প্রধান সমস্যা। তবে নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।

১৮৯৯ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা হয়। নগরের কান্দিরপাড় রানীর দিঘির পাড়ে উচ্চমাধ্যমিক শাখা ও শহরতলির ধর্মপুরে ডিগ্রি শাখার ক্যাম্পাস। মোট ৩২ একর জায়গা নিয়ে ক্যাম্পাস। কলেজটিতে ২০টি বিষয়ে স্নাতক (স্নাতক) ও স্নাতকোত্তর রয়েছে। আছে উচ্চমাধ্যমিক। মোট শিক্ষার্থী ২০ হাজার ৯৯৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ২৮৬ জন, ছাত্রী ১০ হাজার ৭১০। মাত্র ১ হাজার ৩৫ জনের (ছাত্র ৬৩৫, ছাত্রী ৪০০ জন) আবাসনব্যবস্থা রয়েছে। বাকিদের কলেজে থাকার ব্যবস্থা নেই। শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব একটি বাস রয়েছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১০টি বাস ভাড়ায় পরিচালনা করছে। সব মিলিয়ে এসব বাসে ৫৬২ জনের বসার জায়গা রয়েছে। 

একাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থী নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘কুমিল্লা শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দূরে মনোহরগঞ্জ উপজেলায় আমার গ্রামের বাড়ি। কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের একমাত্র ছাত্রাবাসে ১০০ জনের মতো থাকতে পারে। সিট না পেয়ে মেসে (ভাড়া বাসা) উঠেছি। কিন্তু পড়াশোনার খরচ চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে।’ 

বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ ফাঁকা

গত রোববার বেলা ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত কলেজের ধর্মপুর ক্যাম্পাসে স্নাতক (পাস), স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর শাখায় ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষই ফাঁকা। কোনো কোনো বিভাগে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি একেবারেই কম। বেলা দেড়টার পর কোনো ক্লাস হয় না। যেন সুনসান নীরবতা। কলেজের খেলার মাঠে কচুরিপানা, কচুসহ বিভিন্ন প্রজাতির আগাছা জমে আছে। তার ওপর মাঠে জলাবদ্ধতা। মিলনায়তনের অবস্থাও নাজুক। একমাত্র ছাত্রীনিবাস নওয়াব ফয়জুন্নেসা ছাত্রীনিবাসের সামনে জলাবদ্ধতার চিহ্ন। ছাত্রদের কবি নজরুল ছাত্রাবাসের জানালা ভাঙা। পলেস্তারা খসে পড়েছে। 

কলেজশিক্ষক পরিষদের সম্পাদক ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক বিজয় কৃষ্ণ রায় বলেন, বেলা দেড়টার পর শিক্ষার্থীরা কলেজে থাকে না। সকাল ৯টা থেকে ক্লাস শুরু হয়। তবে ব্যবহারিক ক্লাস বিকেলে হয়। শিক্ষক ও অবকাঠামো হলে কলেজ আরও লাভবান হতো। 

● আগামী পর্ব: কারমাইকেল কলেজ