ফেলোশিপে বাড়ে দক্ষতা, অভিজ্ঞতা

ফেলোশিপের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ছবি: সংগৃহীত
ফেলোশিপের মাধ্যমে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। ছবি: সংগৃহীত

সাধারণত পেশাজীবী ও তরুণ গবেষকদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ দেওয়ার জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অন্য দেশের তরুণদের যুক্ত করার একটি প্রক্রিয়ার অংশ হচ্ছে ফেলোশিপ। ফেলোশিপ গ্রহণের মাধ্যমে ব্যবহারিক দক্ষতা বিকাশের যেমন সুযোগ থাকে, তেমনি নিজের অভিজ্ঞতাও অন্যদের জানানো যায়। শিক্ষার্থীরা যেমন বৃত্তি পেয়ে কম খরচে বা বিনা খরচে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পান, ফেলোশিপ এই সুযোগের চেয়ে আলাদা। এখানে পড়াশোনার বাঁধাধরা নিয়ম না থাকলেও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, কর্মশালা, সেমিনার ও প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে অংশগ্রহণকারীদের দক্ষতা বিকাশের সুযোগ থাকে।

দীর্ঘদিন দেশের প্রযুক্তি খাতে কাজ করার সুবাদে একটি ফেলোশিপের সুযোগ পেয়েছিলেন প্রকৌশলী নিলয় দাস। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের আমন্ত্রণে ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ সপ্তাহের একটি ফেলোশিপে অংশ নেন তিনি। বললেন, ‘দেশের বাইরে এ ধরনের অভিজ্ঞতা যেমন পেশাদার অভিজ্ঞতা বাড়ায়, তেমনি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্পর্কে গভীর ধারণা পাওয়া যায়।’ নতুন নতুন পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার জন্য এই অভিজ্ঞতা বেশ কার্যকর। রাতুল দেব জাপান-ইস্ট এশিয়া নেটওয়ার্ক অব এক্সচেঞ্জ ফর স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইয়ুথ কর্মসূচিতে জাপানে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। তাঁর ভাষ্য, ‘যেকোনো ফেলোশিপের মাধ্যমে নিজের দক্ষতা যেমন বাড়ানো যায়, তেমনি নিজের কাজের উদ্যোগ নিয়ে নতুন নতুন ধারণা বিকাশের সুযোগ বাড়ে।’

ইন্টারনেটে পছন্দসই ফেলোশিপ আপনি নিজেই খুঁজে পেতে পারেন। দুই সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস মেয়াদি ফেলোশিপও আছে। চাহিদা অনুযায়ী যোগ্যতা যদি থাকে, তাহলে ঘরে বসেই আবেদন করতে পারেন।

যুক্তরাজ্যে তরুণ শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের জন্য বিভিন্ন ফেলোশিপ দেওয়া হয়। এর মধ্যে শেভনিং ফেলোশিপ বেশ আলোচিত। শেভনিং অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ ফেলোশিপ, সাউথ এশিয়া জার্নালিজম ফেলোশিপে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী আবেদন করে থাকেন। বিস্তারিত জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে: chevning.org

আবার ঢাকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন ফেলোশিপের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। ফুলব্রাইট টিচিং এক্সিলেন্স অ্যান্ড অ্যাচিভমেন্ট প্রোগ্রাম, হুবার্ট এইচ হামফ্রে ফেলোশিপ, ইন্টারন্যাশনাল লিডার্স ইন এডুকেশন প্রোগ্রাম, ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লিডারশিপ প্রোগ্রাম, ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ

ফেলো প্রোগ্রামসহ বিভিন্ন ফেলোশিপের জন্য সারা বছর বিভিন্ন সময়ে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়। বিস্তারিত: bd.usembassy.gov। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফেলোশিপ প্রদান করা হয়, যা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে নিয়মিত প্রকাশ করা হয়।

অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সরকার ফেলোশিপ দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশের দূতাবাস ও হাইকমিশনের ওয়েবসাইটে নিয়মিত চোখ রাখতে হবে। এ ছাড়া বিভিন্ন নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে ফেলোশিপ বিভাগে বিভিন্ন খবর পাওয়া যাবে।

ফেলোশিপ পেতে যা যা লাগবে

সাধারণত ফেলোশিপ বিভিন্ন পেশাজীবী ও গবেষকদের প্রদান করা হয়। এ জন্য কয়েক বছরের কাজের অভিজ্ঞতা যেমন থাকতে হবে, তেমনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকা জরুরি। শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল আবেদনে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও ভালো সিজিপিএ আপনাকে কখনো কখনো এগিয়ে রাখবে। এ ছাড়া বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সদস্য পরিচিতি ফেলোশিপ আবেদনে জোর বাড়ায়।

ফেলোশিপ প্রক্রিয়া

সাধারণত অনলাইনে বিভিন্ন ফেলোশিপের আবেদন গ্রহণ করা হয়। অনলাইনে বাছাইয়ের পর বাছাইকৃত প্রার্থীদের ভাইভা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। ভাইভার পরেই নিশ্চিত করা হয় ফেলোশিপ। আবেদনের প্রক্রিয়ায় জমা দেওয়া সব কাগজপত্র ও সুপারিশপত্র বেশ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। কোনো কোনো ফেলোশিপে ভাষা দক্ষতা সনদ হিসেবে আইইএলটিএস বা টোয়েফল স্কোর সংযুক্ত করতে হয়।