চীনাদের চেনা

চীনে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শিক্ষক চি ইউশুয়ের সঙ্গে লেখক (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
চীনে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের শিক্ষক চি ইউশুয়ের সঙ্গে লেখক (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও চীনের সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক আত্মসম্পর্ক আরও এগিয়ে নিতে ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর চীনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে চীন-বাংলাদেশ যুব ক্যাম্প। এ বছর ক্যাম্পে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট, শান্ত-মারিয়াম কনফুসিয়াস ক্লাসরুমসহ মোট ৪টি দলের ১৪৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে আমিও ছিলাম। পৃষ্ঠপোষকতায় ছিল চীন দূতাবাস ও আয়োজক ইউনান বিশ্ববিদ্যালয় এবং কনফুসিয়াস হেডকোয়ার্টার। ২৫ আগস্ট থেকে ৬ সেপ্টেম্বর—দুই সপ্তাহের এই ক্যাম্পে আমরা বাংলাদেশকে তুলে ধরেছি বিভিন্ন পরিবেশনার মাধ্যমে। ক্যাম্পের উদ্বোধনী দিনে স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার দায়িত্ব পড়েছিল আমার কাঁধে আর সেই বক্তব্য দিয়েই ঘটেছে এই কাণ্ড, যার কথা শুরুতে বলছিলাম।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মিটার ওপরে পাহাড়ি এলাকায় চমৎকার এক শহর কুনমিং। যাকে অনেকেই চিরবসন্তের শহর বলে উল্লেখ করেন। প্রায় দুই সপ্তাহব্যাপী ক্যাম্পে আমরা ঘুরে দেখেছি চীনের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান। ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্টোন ফরেস্ট ভ্রমণ ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে রোমাঞ্চকর। একনজরে পুরো স্টোন ফরেস্টের দেখা পেতে আমাদের অনেকটা পথ হেঁটে পৌঁছাতে হয়েছিল পাথরের পাহাড়ের চূড়ায়। আঁকাবাঁকা আর এবড়োখেবড়ো পাথুরে পথে প্রতিটি ধাপ সেখানে অনেক সাবধানে ফেলতে হচ্ছিল। গুহার মতো কিছু জায়গা ছিল বেশ সংকীর্ণ আর ভুতুড়ে। হাঁটতে একটু উনিশ-বিশ হলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা সেখানে প্রবল।

যুব ক্যাম্প ২০১৯–এর অংশ হিসেবে আমরা চীনের ইউনান ইউনিভার্সিটিতে বৃক্ষ রোপণ করেছি। গাছটি বাংলাদেশ ও চীনের তরুণ প্রজন্মের বন্ধুত্বের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে থাকবে। ইউনান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, বিশাল লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়া, সবুজে ঘেরা নতুন–পুরোনো দুটি ক্যাম্পাস, ব্যায়ামাগারসহ নানা স্থানে আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়। চীনের ঐতিহ্যবাহী কুংফু, নাচ শেখার জন্যও বরাদ্দ ছিল বেশ কিছুটা সময়। পুরোটা সময় উপভোগ করেছি নিজেদের মতো করে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বন্ধুদের সামরিক শিক্ষা গ্রহণ, নিয়মমাফিক দৈনন্দিন জীবন ছিল চোখে পড়ার মতো। ক্যাম্পের মধ্যের তিন দিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় ইউনান প্রদেশের পুরোনো রাজধানী তালিতে। ইংরেজিতে যা ‘Dali’ চীনাদের ভাষায় তা ‘তালি’। তালিতে আমাদের এক দিন কাটে আরহাই ক্রুজে। সেখানে আমাদের দুইটি দ্বীপের মতো স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। দ্বীপগুলোতে সুবিশাল রেস্টুরেন্ট, বাজার, উপাসনালয় থেকে শুরু করে ছিল আরও নানা কিছু।

চীনাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হলে চীনা ভাষা জানা খুবই জরুরি। আমাদের দলের অনেকেই কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট থেকে চীনা ভাষার কোর্স করেছিলাম, কাজটা আমাদের জন্য কিছুটা সহজ ছিল। কুনমিংয়ের ন্যাশনাল অ্যাডভার্টাইজ ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শনে আমরা চীনের প্রযুক্তি উন্নয়ন খাত নিয়ে জানতে পারি নতুন নতুন অনেক তথ্য। একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী অনেক এগিয়ে গেছে, তার অন্যতম উদাহরণ চীন।

বাংলাদেশের ষড়্ঋতু নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউটের পরিবেশনা আমাদের চীনা বন্ধুদের কাছে ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয়। তারা বাংলার বর্ণিল ছয় ঋতুর রূপ উপভোগ করতে আমাদের দেশে আসতে চায়। আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২০ সাল বাংলাদেশ চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বছর। তার ঠিক আগে, ২০১৯ সালের এই যুব ক্যাম্পে বাংলাদেশের তরুণ শুভেচ্ছাদূত হয়ে আমাদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।