জাবি শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ, ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন একই বিভাগের এক ছাত্রী। দীর্ঘদিনের যৌন হয়রানির কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ওই ছাত্রী আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই ছাত্রীর করা লিখিত অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাসরীন সুলতানা। তিনি বলেন, ১৯ সেপ্টেম্বর বিভাগের এক ছাত্রী সহকারী অধ্যাপক সানওয়ার সিরাজের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। গত বুধবার অভিযোগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে।

লিখিত অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ৩০১ নম্বর কোর্সটি (কম্পারেটিভ পলিটিকস অব ল্যাটিন আমেরিকা) পড়ান সানওয়ার সিরাজ। এই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার বিষয়ে কথা বলার জন্য গত বছরের শুরুর দিকে সানওয়ার সিরাজের অফিসকক্ষে দেখা করতে যান তিনি। সেখানে তাঁর মুঠোফোন নম্বর নেন ওই শিক্ষক। এরপর গত বছরের ১২ মার্চ ওই কোর্সটির মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেন ওই ছাত্রী। সেদিন মুঠোফোনে কল করে ছাত্রীর পরীক্ষার খোঁজখবর নেন সানওয়ার সিরাজ। ওই দিন রাতেই ওই ছাত্রীর মেসেঞ্জারে ‘আপত্তিকর প্রস্তাব’ দিয়ে খুদে বার্তা পাঠান তিনি।

ওই ছাত্রীর অভিযোগ, একপর্যায়ে সানওয়ার সিরাজের এ ধরনের আচরণ থেকে মুক্তি পেতে ওই শিক্ষকের পরিচিত শিক্ষকদের দিয়ে বিরক্ত না করার অনুরোধও জানান তিনি। কিন্তু পরীক্ষার খাতা তিনি দেখবেন বলে ভয় দেখিয়ে বারবার এ প্রসঙ্গ টেনে আনতেন ওই শিক্ষক।

জানতে চাইলে ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই শিক্ষকের দীর্ঘদিনের যৌন হয়রানিমূলক আচরণের কারণে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। গত বছরের আগস্ট মাসে বিভাগে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত এক সেমিনারে এ বিষয়ে কথা বললে বিভাগের তৎকালীন সভাপতি সামসুন্নাহার খানম আমাকে তথ্যপ্রমাণসহ অভিযোগ জানাতে বলেন। পরে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানালে তিনি বিষয়টি চেপে যাওয়ার পরামর্শ দেন।’

তবে অধ্যাপক সামসুন্নাহার খানম এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই ছাত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে আমাকে কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হতো।’ বিষয়টি চেপে যাওয়ার পরামর্শের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ অভিযোগ অসত্য। আমার ছাত্রী আমার বিরুদ্ধে কেন এ ধরনের কথা বলছে, আমি বুঝতে পারছি না।’

এদিকে ঘটনার কোনো বিচার না পাওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসায় ঘুমের বড়ি খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ওই ছাত্রী। সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র ও একজন কর্মকর্তা তাঁকে ওই বাসা থেকে উদ্ধার করে সাভারের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নেওয়ার পর গতকাল বৃহস্পতিবার ওই ছাত্রীকে বাড়িতে পাঠানো হয়।

এ বিষয়ে ওই ছাত্রী বলেন, ‘ক্রমাগত হয়রানির কারণে আমি বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। বেশ কিছু জায়গায় জানানোর পরও বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সানওয়ার সিরাজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে কেউ চাইলে যে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে পারে। যেহেতু অভিযোগটি যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে রয়েছে, তদন্তে সবকিছু প্রকাশ পাবে। তাতে যদি আমি দোষী হই, তাহলে আমি শাস্তি পাব। আর যদি কেউ মিথ্যা অভিযোগ তোলে, তারও শাস্তি হওয়া উচিত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বুধবার অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন এবং আমরা কাজ করছি।’

তবে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতারের ওপর অভিযোগকারী ছাত্রী অনাস্থা জানিয়েছেন। রাশেদা আখতার প্রধান হিসেবে এই অভিযোগের তদন্ত করলে তিনি সাক্ষ্য দিতে যাবেন না বলে জানিয়েছেন।

অনাস্থার বিষয়ে ওই ছাত্রী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক ছাত্রী। কিন্তু দুই বছর পার হলেও অভিযোগের কোনো তদন্ত করা হয়নি। এমন অভিযোগ আরও ছিল। কোনোটিরই সুষ্ঠু তদন্ত হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক বছর আগে একটি সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে গিয়ে রাশেদা আখতারের কাছে আমি পুনরায় নিপীড়িত হয়েছি। তিনি আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন এবং আমার প্রমাণাদি গ্রহণ করেননি।’

এ বিষয়ে অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, ‘এটা সে বলতেই পারে। এটি তার ধারণাপ্রসূত বিষয়। এই কমিটিতে শুধু আমি না। আরও ছয়জন সদস্য আছেন। সবার তদন্তের মাধ্যমে আসল তথ্য বেরিয়ে আসবে।’