বাবার শিক্ষা, মায়ের স্নেহে গড়া

তনুজা দেবনাথ
তনুজা দেবনাথ

বইপড়া, বেহালা বাজানো আর আঁকাআঁকি করা মেয়েটার গানের প্রতি আগ্রহ সেই ছোটবেলা থেকে। নাম তনুজা দেবনাথ। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের স্নাতক পর্যায়ে, উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। গানের পাশাপাশি ভালো ছাত্রী হিসেবেও ক্যাম্পাসে বেশ সুনাম আছে তাঁর।

 ‘আমার বাবা গানের শিল্পী। সাড়ে চার বছর বয়সে তাঁর কাছেই গানে হাতেখড়ি হয়েছিল।’ বলেন তনুজা। বাবার হাত ধরে শুরু, এরপর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বেশ কয়েকজন ওস্তাদের কাছে তালিম নিয়েছেন তিনি। শিখেছেন বেহালা, শাস্ত্রীয় সংগীত, সঙ্গে ছবি আঁকাও। ২০১৮ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক গানে তৃতীয় হয়েছিলেন। এ বছর জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে আয়োজিত প্রতিযোগিতায়ও পেয়েছেন পুরস্কার। এ প্রতিযোগিতার বিভিন্ন ধাপে প্রথম হওয়া বিজয়ীদের পাঁচ দিনের জন্য ভারত সফরে পাঠানোর ব্যবস্থা করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এই সেপ্টেম্বর মাসেই তনুজা ঘুরে এসেছেন ভারতের দিল্লি, জয়পুর ও আগ্রা। জীবনের প্রথম ভিনদেশে বেড়িয়ে আসার রোমাঞ্চ এখনো খেলা করছে তাঁর চোখে–মুখে। বললেন, ‘আগ্রার তাজমহল ও দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী জাদুঘর আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে।’

উপজেলা পর্যায়ে আয়োজিত শিক্ষা সপ্তাহের সংগীত প্রতিযোগিতায় রবীন্দ্র, নজরুল, পল্লি ও দেশাত্মবোধক গানে পুরস্কার পেয়েছেন তনুজা দেবনাথ। জেলায় রবীন্দ্রসংগীতে সেরার পুরস্কারটি তাঁর। ২০১৮ সালে জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে সদর উপজেলায় শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থীর পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।

বাবা গানের গুরু, আর এখন গানের তত্ত্বাবধান করেন মা চন্দনা রানী মহাজন। ভারতের বিশ্বভারতীতে সংগীত বিষয়ে পড়ার ইচ্ছে ছিল তনুজার। কিন্তু উচ্চমাধ্যমিকের ফল আশানুরূপ না হওয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। তাতে অবশ্য তনুজা ভেঙে পড়েননি। কেন? এ প্রশ্নের খুব সুন্দর একটা উত্তর এল তাঁর কাছ থেকে, ‘বাবা আমাকে কাছে রাখতে চান। বন্ধুরা অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। ওদের দেখে আমার মন খারাপ হয় না। প্রতিদিন সকালে মায়ের মুখ দেখা, মায়ের হাতের রান্না খাওয়া, এটাই তো একটা অন্য রকম সুখ।’

শাহাদৎ হোসেন