গণরুমের সমাধান না হলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিসির বাসায় উঠবেন তানভীর

ডাকসু সদস্য তানভীর হাসানের নেতৃত্বে ছাত্রসমাবেশ। রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: প্রথম আলো
ডাকসু সদস্য তানভীর হাসানের নেতৃত্বে ছাত্রসমাবেশ। রাজু ভাস্কর্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: প্রথম আলো

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসনসংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১৫ দিনের আলটিমেটাম দিলেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান ওরফে সৈকত। এ সময়ের মধ্যে চলমান সংকট সমাধানে দৃশ্যমান উদ্যোগ না দেখা গেলে নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে ওঠার হুমকি দিয়েছেন তিনি।

আবাসনসংকটের ফলাফল গণরুমব্যবস্থা। এক কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয় অনেক শিক্ষার্থীকে। গত মার্চে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন হলেও এ অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গণরুম সমস্যা সমাধান ও নবীন শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে ভর্তির দাবিতে এক ছাত্রসমাবেশ থেকে এই আলটিমেটাম দেন ডাকসু সদস্য তানভীর।

সদস্য তানভীর হাসান যে আলটিমেটাম দিয়েছেন, এর সঙ্গে পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছেন ডাকসুর ভিপি নুরুল হক। নুরুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি অনাস্থা থেকেই তানভীর এই আলটিমেটাম দিয়েছেন। তাঁর দাবির প্রতি আমি সমর্থন জানাচ্ছি। গণরুম সংকটের আশু সমাধান না করলে শুধু উপাচার্যের বাসভবনে নয়, শিক্ষার্থীদের আমি হল প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষকসহ যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক সুবিধা ভোগ করেন, তাঁদের বাসভবনে গিয়ে ওঠার আহ্বান জানাব।’

চলতি শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তিপ্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পাঁচটি ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ডাকসু সদস্য তানভীরের দাবি, বিগত শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত রাখতে হবে।

ডাকসু সদস্য তানভীর মনে করেন, বিশ্বের সেরা এক হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গা না হওয়ার মূল কারণ আবাসনসংকট। সমাবেশে তিনি বলেন, গণরুমব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের ফায়দা লুটে নেয়। তারা গণরুমকে দাসত্বের কারখানায় পরিণত করেছে। উপাচার্যের উদ্দেশে তানভীর বলেন, ‘১৫ দিনের মধ্যে গণরুম সমস্যার যৌক্তিক সমাধান না করলে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আপনার বাসায় গিয়ে থাকা শুরু করব। ১৫ দিনের এদিক-ওদিক হবে না।’

সমাবেশে তানভীরের সঙ্গে প্রথম বর্ষের ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁদের হাতে ছিল ‘আমরা এখন চুপসে গেছি, জ্ঞানশূন্য কালো মাছি’, ‘গণরুমের বঞ্চনা, মানি না মানব না’, ‘প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের অধিকার চাই’ প্রভৃতি লেখাসংবলিত প্ল্যাকার্ড।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল পর্যন্ত কবি জসীমউদ্‌দীন হলের নিজের আবাসিক কক্ষ ছেড়ে গণরুমে ছিলেন ডাকসু সদস্য তানভীর। নির্বাচনের সময় গণরুম সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়ে ভোট চাইলেও কোনো সমাধান করতে না পারার আক্ষেপ থেকে গণরুমে উঠেছিলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে উপাচার্য ও ডাকসু বরাবর গণরুম সমস্যা সমাধানে নিজের প্রস্তাব জানিয়ে চিঠিও দেন তানভীর। ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে ডাকসুর সদস্য নির্বাচিত হওয়া তানভীর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যও ছিলেন।

ডাকসুর অবস্থান কী?
গত বৃহস্পতিবার ডাকসুর তৃতীয় কার্যনির্বাহী সভায় গণরুমব্যবস্থা উচ্ছেদের দাবি জানান ভিপি নুরুল হক (সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক), এজিএস (বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক) সাদ্দাম হোসেনসহ ডাকসুর নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধিরা।

সেখানে ভিপি নুরুল হকের বক্তব্য ছিল, প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট শতাংশ আসন বরাদ্দ এবং হলগুলোতে কোনো ছাত্রসংগঠনের কর্তৃত্ব নয়, প্রশাসনিকভাবে আসন বণ্টনসহ সব কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

সেই সভায় এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেছিলেন, তাঁরা পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় চান। সেটি যত দিন না সম্ভব হচ্ছে, তত দিন গণরুমের জীবনমান উন্নয়ন, গণরুমকে মানবিক ও বন্ধুরুম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সেখানে বাঙ্ক বেড ও লকারের ব্যবস্থা, প্রশাসনিকভাবে ওয়াই-ফাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

ভিপি নুরুল হক তানভীরকে সমর্থন জানালেও তানভীরের দাবির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি এজিএস সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘গণরুম সংকটের সমাধান করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির মাধ্যমে সংকটের সমাধানে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু গণরুম সংকটের স্থায়ী সমাধানের জন্য নতুন ভবন করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগে প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আবাসিক হলে বৈধ আসন পান না। হলে থাকতে হলে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা গণরুমগুলোতে উঠতে হয়, বিনিময়ে যেতে হয় ওই সংগঠনের নিয়মিত রাজনৈতিক কর্মসূচিতে। ডাকসু নির্বাচনের সময় বিজয়ী ও বিজিত প্রায় সব প্যানেলের ইশতেহারে গণরুমব্যবস্থার সমাধানের আশ্বাস থাকলেও ডাকসু কার্যকর হওয়ার অর্ধবছর পরও ওই ব্যবস্থা বহাল রয়েছে।