ধাওয়ায় পড়ে গেলেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা, বেধড়ক মারধর ছাত্রলীগের

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। পরে ছাত্রলীগ মিছিলে ধাওয়া দেয়। ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। পরে ছাত্রলীগ মিছিলে ধাওয়া দেয়। ছবি: সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের নেতা–কর্মীদের মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ক্যাম্পাসে সহাবস্থানের দাবিতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদ চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। মিছিলে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতা–কর্মী অংশ নেন। মিছিলটি ভাস্কর্য চত্বরের পৌঁছালে পেছন থেকে ছাত্রলীগের কর্মীরা ধাওয়া দেন। ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাস থেকে সরে যাওয়ার সময় প্রধান ফটকের সামনে ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা–কর্মী পড়ে যান। পড়ে যাওয়া নেতা–কর্মীদের বেধড়ক মারধর শুরু করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।

প্রক্টর দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের কর্মীরা আবদুর রশিদ নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আটক ও মারধর করে প্রক্টর দপ্তরে নিয়ে আসেন। প্রক্টর দপ্তর ছাত্রদল নেতার চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যেতে চেষ্টা করে। কিন্তু আবার হামলার আশঙ্কায়, নিরাপত্তার জন্য কোতোয়ালি থানার পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পুলিশ আবদুর রশিদকে মিডফোর্ড হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র। তাৎক্ষণিকভাবে হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা–কর্মীদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলা। ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতার ওপর ছাত্রলীগের হামলা। ছবি: সংগৃহীত

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, আবদুর রশিদকে চিকিৎসা শেষে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা যাছাই–বাছাই করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ছাত্রদলের সাত নেতা–কর্মী গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত নেতা–কর্মীরা হলেন অর্থনীতি বিভাগের প্রথম ব্যাচের মাহফুজুর রহমান, তৃতীয় ব্যাচের আবদুর রশিদ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের আবিদ কামাল, চতুর্থ ব্যাচের রোকনুজ্জামান, পঞ্চম ব্যাচের সবুজ হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের সপ্তম ব্যাচের জামাল উদ্দিন এবং ইতিহাস বিভাগের সপ্তম ব্যাচের জামাল উদ্দিন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আসিফ রহমান হামলার প্রতিবাদ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হঠাৎ পেছন থেকে শাখা ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা হামলা চালিয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে আমরা আহত নেতা–কর্মীদের চিকিৎসা শেষে প্রক্টর দপ্তরে অভিযোগ করব।’ তিনি বলেন, ছাত্রদল নিয়মিত ক্যাম্পাসে আসবে এবং ক্যাম্পাসের অবস্থা প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের এক নেতাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতারা। ছবি: সংগৃহীত

এদিকে দুপুরে সাবেক কেন্দ্রীয় ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের একটি প্রতিনিধিদল প্রক্টর দপ্তরের ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবাদ ও অভিযোগ জানাতে আসে। প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রতিনিধিদলের বৈঠক চলছিল।

ছাত্রদলের ওপর হামলার অভিযোগের সম্পর্কে জানতে চাইলে সর্বশেষ শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলন আয়োজন কমিটির আহ্বায়ক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল থেকে ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেন। এতে ছাত্রলীগের কর্মীরা সংগঠিত হয়ে তাঁদের ধাওয়া দিলে পালানোর সময় কয়েকজন রিকশায় ধাক্কা ও হোঁচট খেয়ে আহত হন। পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা একজনকে চড়থাপ্পড় ও জামা ছিঁড়ে দিয়ে প্রক্টর অফিসে নিয়ে যান।’

আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে শাখা ছাত্রলীগের কমিটি নেই। কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানানো হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোস্তফা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, আমাদের কাছে বিচার চেয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।