স্বপ্ন তাঁর হিমালয় ছোঁয়া

মাসুদ পারভেজ
মাসুদ পারভেজ

পাহাড় ভালো লাগে মাসুদ পারভেজের। আবার সমুদ্রের ডাকও অগ্রাহ্য করতে পারেন না। তাই তো পাহাড়প্রেমী মাসুদের ফেসবুকে গিয়ে দেখা গেল, সমুদ্রের সঙ্গে ছবি। ক্যাপশনে লেখা, ‘পাহাড়প্রেমীকেও মাঝে মাঝে হারাতে হয় সমুদ্রের বিশালতায়।’

মাসুদ পারভেজের ডাকনাম সুজন। পড়ছেন সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। পুরকৌশল বিভাগে, চতুর্থ বর্ষে। খুব বেশি মানুষ চেনে না এই ক্যাম্পাসকে। হাঁটি হাঁটি পা পা করে এ বছরই ক্যাম্পাসের বয়স ৯ পেরিয়ে পড়ল ১০–এ। কেন তিনি ক্যাম্পাসের প্রিয়মুখ, তা নিশ্চয়ই এতক্ষণে জেনে গেছেন। ঘুরতে ভালোবাসেন তিনি। আর মাসুদের ভাষায়, ‘আমাদের ক্যাম্পাসে একেকজন একেক কার্যক্রমের জন্য পরিচিত। কেউ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের চেনামুখ। কেউ সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। আর জনপ্রিয়তা পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো সিনিয়রদের ছবি তুলে দেওয়া। কিন্তু আমাকে সবাই চেনে ঘোরাঘুরির মাধ্যমে। সম্ভবত আমাদের ক্যাম্পাসের অন্য কেউ কখনো এভাবে পরিচিতি পায়নি।’

তা বটে। মাসুদ আজ বিছনাকান্দি তো কাল সাঙ্গুর জলে। পরশু দেখা যাবে তিনি কেওক্রাডাংয়ের চূড়ায় উঠে ছবি দিচ্ছেন ফেসবুকে। আর গত বছর তো গেলেন মিশন হিমালয়ে। রোপ ফোর আয়োজিত এই প্রকল্প থেকে ৬০ জন পাহাড় চড়িয়ের মধ্যে প্রথম হয়ে প্রশিক্ষককে সঙ্গী করে পা রাখলেন নেপালের ইয়ালা পিকে। এই দলে অবশ্য তৃতীয় আরেকজন ছিলেন। তিনি সাড়ে তিন হাজার মিটার উচ্চতায় উঠে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই আর সামিট করা হয়নি। মজার ব্যাপার হলো, নেপালের এই পিকে বাংলাদেশিদের অভিযান হয়েছে খুব কম। সেই হিসেবে মাসুদ বিরল অভিজ্ঞতার অধিকারী। তাই সমতল থেকে ৫ হাজার ৫০০ মিটার উঁচুতে উঠে যখন বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরে চিৎকার করেছেন, সেটিই ছিল তাঁর জীবনের সেরা অনুভূতি।

অসংখ্য পাহাড়ের উচ্চতা মুখস্থ মাসুদের। তা না রেখে আর উপায় কী। ঘাড়ে ভারী ব্যাগ চাপিয়ে দুপায়ে ভর করে তিনিই তো পাড়ি দেন প্রতিটি ইঞ্চি দূরত্ব। অবাক করা বিষয় হলো, তাঁর পাহাড় ভালো লাগে, আবার পড়তেও ভালো লাগে। ডিপার্টমেন্টে এখন পর্যন্ত তাঁর অবস্থান দ্বিতীয়। সিজিপিএ ৩.৭৩। আর যিনি প্রথম, তাঁর ৩.৭৪। বললাম, ০. ০১—এর পাহাড় তাহলে আর পাড়ি দেওয়া হলো না? দ্বিমত পোষণ করে বললেন, ‘না, তা নয়। আর এখনো এক সেমিস্টারের রেজাল্ট বাকি।’ মানে, পাহাড়, সমুদ্র, সমতল দাপিয়ে বেড়িয়েও ডিপার্টমেন্টে প্রথম হওয়া যায়। সেটি বিশ্বাস করেন তিনি।

ক্যাম্পাসের সিনিয়র, জুনিয়র, শিক্ষকনির্বিশেষে সবাই মাসুদের পিঠ চাপড়ে দেন। না দেওয়ার কারণ নেই। মাসুদের মাধ্যমে দেশ–বিদেশের কত মানুষ জানছে তাঁদের ছোট্ট, আপন এই ক্যাম্পাসের কথা। অনেকেই বলেন, মায়ের রাখা নাম ‘সুজন’– এর সুবিচার করেছেন তিনি।

 ভবিষ্যতে কী হতে চান? উত্তর এল, ‘প্রথমে ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। তারপর ৮ হাজার মিটার উচ্চতার মাইলফলক স্পর্শ করতে চাই।’ শুনে তাই পাল্টা প্রশ্ন করলাম, হিমালয়ের উচ্চতা কত? ছোট্ট করে শুধু বললেন, ‘আট হাজার আট শ আটচল্লিশ মিটার’। তো এই ৮৪৮ মিটারই বা বাদ থাকবে কেন? মাসুদের জবাব, ‘ওটা বলতে চাই না। মনে মনে থাক। বলে ফেললে যদি আর না হয়!’