গানের পাখি

ফটিকজল l ছবি: মো. মারুফ রানা
ফটিকজল l ছবি: মো. মারুফ রানা

ডিম পাড়ার আগে পোষা মুরগিরা যেমন ডাকাডাকি করে দু-চার দিন, যাকে বলা হয় ‘ডিম পাড়ার ডাক’। মেয়ে ফটিকজল পাখিটিও সে রকম দু-চার দিন ডাকাডাকি করে, ডাকটা কর্কশ। এমনিতে ফটিকজলের কণ্ঠ মিষ্টি। প্রতি ভোরেই এরা চুপচাপ ডালপালা বা ঝোপে বসে একটানা ডাকে ও শিস দেয়।

এরা পাঁচ রকমভাবে ডাকে। ‘ডিম পাড়ার ডাক’ শেষ করে লম্বা লয়ের ‘চিরিরি-চিরিরি’ ডাকের শেষে মিষ্টি একটা শিস বাজিয়ে। এভাবে ৫-১৫ মিনিট একটানা ডাকে। এরা গাছের সরু ডালে বাসা করে। খুবই সুন্দর, ছোট বাটির মতো ছিমছাম-আঁটসাঁট বাসা বানায়। বাসার বাইরের আবরণে মাকড়সার জালের আস্তরণ থাকবেই। বাসা করার মৌসুম গ্রীষ্ম-বর্ষা। বাসা শেষ করতে চার-সাত দিন সময় লাগে। দুজনে মিলে বাসা সাজায়। ডিম পাড়ে দু-চারটি। দুজনেই পালা করে তা দেয় ডিমে। ডিম ফুটে ছানা হয় ১৪-১৮ দিনে।

সদ্য উড়তে শেখা ছানাদের দেখায় হলুদ গাঁদা ফুলের মতো। ফটিকজলের চিবুক, গলা, বুক-পেট ও কপাল চকচকে হলুদ, পিঠ সবুজাভ-হলুদ। লেজের আগা কালচে-ধূসর। কালচে পাখার ওপরে সাদা রঙের বুঁটি থাকে। নীলচে-ধূসর ঠোঁট ও পা। তবে প্রজনন মৌসুমে পুরুষটির মাথার তালু কালো হয়, ঘাড়ে ও পিঠে ফোটে হলুদাভ-সোনালি রং। বুকের হলুদ রংটাও বেশি উজ্জ্বল হয়। মেয়েটি পুরুষের তুলনায় কিছুটা নিষ্প্রভ। পিঠের রং তার হলুদাভ-সবুজ। মূল খাদ্য তাল-খেজুরের রস। সুন্দরবনাঞ্চলে পান করে গোলগাছের রস। পোকামাকড়, ফুলের মধুরেণুসহ কচিপাতা-ডগাও খায়।

এরা গাছের সরু ডাল-পাতায় অ্যাক্রোব্যাটদের মতো নানা রকম মজাদার কসরত করে পলাতক পোকামাকড় পাকড়াও করে। শিশির বা বৃষ্টির জমা জলে গোসল যেমন করে, তেমনি পানও করে।

সুগায়ক-নিরীহ ও সুদর্শন ছোট পাখি ফটিকজলের ইংরেজি নাম Common Iora. বৈজ্ঞানিক নাম Aegithina tiphia. দৈর্ঘ্য ১৪ সেন্টিমিটার। ওজন ১৫ গ্রাম।

ফটিকজলের দেখা মিলবে খোদ রাজধানী ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে।