উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে আজ ধর্মঘট

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফারজানা ইসলামকে অপসারণের দাবিতে ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ’ বানিয়ে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ সোমবার এক দিনের ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

গতকাল রোববার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অবরোধের কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেননি। উপাচার্য, সহ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কেউই কার্যালয়ে যাননি। বিকেল পাঁচটায় পুরোনো প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনকারীরা লাগাতার কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ দিনব্যাপী সর্বাত্মক ধর্মঘট। পাশাপাশি কাল মঙ্গলবার থেকে উপাচার্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। 

‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে দুই মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। প্রথম দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগের নেতাদের বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তদন্তসহ তিন দফা দাবিতে এই আন্দোলন শুরু হয়। দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দুই দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আন্দোলনকারীদের দুই দফা দাবি মেনে নিলেও আর্থিক অনিয়মের তদন্তের দাবির বিষয়ে সমঝোতা না হওয়ায় উপাচার্যের পদত্যাগের দাবি জানিয়ে ১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনকারীরা।

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় ২ অক্টোবর থেকে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র ও স্নাতকোত্তর এক শিক্ষার্থীকে শিবিরসংশ্লিষ্টতার সন্দেহে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর চলমান আন্দোলনে ‘শিবিরের সংশ্লিষ্টতা’ আছে বলে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অভিযোগের বিষয়ে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ফারজানা ইসলামের দুর্নীতি ঢাকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে পথ বেছে নিয়েছে, তা হলো শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো বিষয়। যেকোনো আন্দোলন দমানো বা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কাউকে দমাতে চাইলে তাঁকে শিবির বলা বা স্বাধীনতাবিরোধী ট্যাগ দেওয়া হলো ক্ষমতাসীনদের পুরোনো অপকৌশল। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রাক্তন ছাত্র মোটরবাইকে যাচ্ছিলেন, তাঁকে ধরে শিবির বানানো হলো। এখন প্রাক্তন কোনো ছাত্রের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাজনের যোগাযোগ থাকতেই পারে। কিন্তু এর দ্বারা প্রমাণ হয় না যে আন্দোলনের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন। এই আন্দোলন পরিচালিত হচ্ছে ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, সাংস্কৃতিক জোটসহ বামপন্থী, আওয়ামীপন্থী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সমন্বয়ে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে একাডেমিক ও গবেষণা কর্মকাণ্ডের ক্ষতি হয় এমন কোনো কর্মসূচি যেন আন্দোলনকারীরা না দেন; বরং আন্দোলনকারীদের যে দাবিদাওয়া, সেগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে।