তিন মিনিটে গবেষণাকর্ম উপস্থাপন

মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে নিজেদের করা গবেষণার বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে হবে! প্রতিযোগিতার নাম দেওয়া হয়েছে থ্রিএমটি। বিস্ময়কর হলেও সেই কাজটিই করে দেখিয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান স্কুলের (অনুষদ) বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) ১২ জন শিক্ষার্থী। চূড়ান্তপর্বে শিক্ষার্থীদের অসাধারণ বাচনভঙ্গী আর চমৎকার সব বিষয়বস্তু উপস্থাপন মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেছেন সেখানে থাকা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

আজ সোমবার ওই প্রতিযোগিতার চূড়ান্তপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিংয়ারিং ডিসিপ্লিনের রাহাগীর সালেকিন। যৌথভাবে রানারআপ হয়েছেন বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিংয়ারিং ডিসিপ্লিনের ফাবলিয়া রোদশী ও ফরেস্ট্রি অ্যান্ড উড টেকনোলজি ডিসিপ্লিনের আইনুন নিশাত ফরাবী। পিপলস চয়েসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন ফার্মেসি ডিসিপ্লিনের অসিত কুমার দত্ত।

চূড়ান্তপর্বে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের থিসিসের মধ্যে ছিল ডেঙ্গু প্রতিরোধক ভাইরাস ব্যবহার, মুরগি ও গো–খাদ্যে প্রবায়োটিক ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষতিকর হরমন ও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ, তেলাপিয়া মাছের পর্দা ব্যবহার করে দগ্ধ রোগীর ক্ষতের উপশম, চিংড়ি মাছের খোলস ব্যবহার করে ন্যানোফাইবার তৈরিসহ নতুন নতুন গবেষণার বিষয়।

আয়োজকেরা জানান, শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহিত করতে ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে ওই থ্রিএমটি প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বাংলাদেশে ২০১৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ওই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। সেখান থেকে প্রতিবছর ওই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওই প্রতিযোগিতায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার জুলিয়া নিব্লেট। তিনি বলেন, বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার মানোন্নয়নে অস্ট্রেলিয়া সরকার সহায়তা করে আসছে। ওই সহায়তা বৃদ্ধিতে সরকারি পর্যায়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। তিনি অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাবারেটিভ প্রোগ্রামের সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন।

প্রতিযোগিতা সম্পর্কে জুলিয়া নিব্লেট বলেন, থ্রিএমটি প্রতিযোগিতা বিশ্বমানের হয়েছে। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভবিষ্যতে ভালো গবেষক তৈরি হবে। শিক্ষার্থীরা এই প্রতিযোগিতায় থিসিসের যে সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেছে, তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটের বাইরেও আন্তর্জাতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তাঁদের এই গবেষণার উৎকর্ষ সাধন, উচ্চতর পর্যায়ে আরও গবেষণা করে সেখান থেকে ভালো ফলাফল বেরিয়ে আসতে পারে, যা ভবিষ্যতে মানবকল্যাণে উপকারে আসবে। তিনি কলাগাছের অব্যবহৃত অংশ দিয়ে কাগজসহ কয়েকটি উদ্ভাবন এবং এ ধরনের নতুন নতুন ধারণা উপস্থাপনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান। তিনি বলেন, থ্রিএমটি প্রতিযোগিতা একটি অনন্য উদ্যোগ। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপস্থাপনা কৌশলসহ গবেষণায় নতুন দিকনির্দেশনা পাবে। তিনি ওই কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা করারও আশ্বাস দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন অধ্যাপক মো. রায়হান আলী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন থ্রিএমটি প্রতিযোগিতার আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক শামীম আহমেদ কামাল উদ্দিন খান। চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করেন আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিনের শিক্ষক আহসান হাবীব।
এ সময় ট্রেজারার সাধন রঞ্জন ঘোষ, বিভিন্ন স্কুলের ডিন, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ডিসিপ্লিন প্রধান, ছাত্রবিষয়ক পরিচালক ও জীববিজ্ঞান স্কুলের অধীন বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।