পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনভর বিক্ষোভ, সাংসদের মধ্যস্থতায় শান্ত

১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: হাসান মাহমুদ
১২ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: হাসান মাহমুদ

চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে উপাচার্যের ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্তসহ বিভিন্ন দাবিতে আজ মঙ্গলবারও পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রতি) শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিনভর বিক্ষোভ বিক্ষোভ করেছেন।

এ অবস্থায় আজ স্থানীয় সাংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করেন। পরে সাংসদের মধ্যস্থতায় শিক্ষার্থীরা দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে শান্ত হয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ, উপাচার্যকে সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে অবস্থান, পরীক্ষার মান উন্নয়ন ফি কমানো, ছাত্র-শিক্ষকদের গবেষণা বরাদ্দ বৃদ্ধি, খেলার মাঠ উন্নয়ন ও শহীদ মিনার স্থাপন।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক পদে নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উত্তীর্ণ হতে না পেরে মনিরুল ইসলাম নামের এক পরীক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে উপাচার্যের পথ আটকে আট লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ তোলেন। চাকরি না দেওয়ায় তিনি উপাচার্যর কাছে টাকা ফেরত চান। ওই দিন রাতে এ-সংক্রান্ত একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়। ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি), নিয়োগ পরীক্ষাটি বাতিল ও উপাচার্যকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করায় তিন শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের কয়েকজন জানান, ঘটনার তিন দিন পর গতকাল সোমবার সকালে ক্যাম্পাস খুলতেই শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হতে শুরু করেন। এদিন তাঁরা চার দফা দাবিতে দিনভর বিক্ষোভ করেন। পরে সে দাবির সঙ্গে আরও দাবি যুক্ত করে আজ সকাল থেকে আবার বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল করেন। একপর্যায়ে তাঁরা ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আটকা পড়েন। অনেকে দেয়াল টপকে ও ফটকের ওপর দিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে বেরিয়ে যান। আজ বেলা একটার দিকে পাবনা-৫ আসনের সাংসদ গোলাম ফারুক ক্যাম্পাসে হাজির হন। তিনি এক ঘণ্টা ক্যাম্পাসে অবস্থান করে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা ফিরে যান।

দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংসদ গোলাম ফারুক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগ দাবি যৌক্তিক। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। আমরা বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। কিছু দাবি তাঁরা তাৎক্ষণিকভাবে পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে উপাচার্যে কাছে চাকরিপ্রার্থীর ঘুষ ফেরত চাওয়ার অডিও প্রকাশ বিষয়ে তদন্ত এবং প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টার পদত্যাগ বিষয়ে নিয়ে আলোচনা চলছে। দাবির পক্ষে যৌক্তিকতা থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে উপাচার্য এম রোস্তম আলী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। একটি চক্র বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রকাশিত অডিওটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে সে বিষয়েও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন উপাচার্য।