অতিথি শিক্ষকে চলে ফেনী কলেজ

ফেনী সরকারি কলেজ
ফেনী সরকারি কলেজ

কলেজটিতে ইংরেজি বিষয়ে উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পাঁচ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। শিক্ষকের পদ থাকার কথা ১২টি। কিন্তু পদ আছে ৫টি। এর মধ্যে দুটি পদ শূন্য। নিয়মিত তিন শিক্ষকের পাশাপাশি একজন অতিথি শিক্ষক নেওয়া হয়েছে। তাতেও বিপুল পরিমাণ শিক্ষার্থীকে পড়াতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ চিত্র ফেনী সরকারি কলেজের।

কলেজটিতে অন্যান্য বিভাগেও শিক্ষকসংকট আছে। শিক্ষকেরা বলেছেন, প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর এই কলেজে শিক্ষক প্রয়োজন কমপক্ষে ১৫২ জন। সেখানে সৃষ্ট পদই আছে ৭৩টি। যার মধ্যে ১০টি আবার শূন্য। এখন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৩১৭ জন।

শিক্ষকসংকটের কারণে শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে কলেজে ১০ জন অতিথি শিক্ষক নেওয়া হয়েছে বলে জানালেন কলেজের অধ্যক্ষ বিমল কান্তি পাল। অতিথি শিক্ষকদের প্রতি ক্লাসের জন্য ২০০ টাকা করে দেওয়া হয়। এই টাকা নিজ নিজ বিভাগের শিক্ষার্থীদের সেমিনার ফি থেকে দেওয়া হয়।

শিক্ষকসংকটের পাশাপাশি শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা, স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর স্তরে শ্রেণি কার্যক্রম কম হওয়া, আবাসনসংকটসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে শতবর্ষী এ কলেজটি। ১৯২২ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও বর্তমানে ১৫টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর স্তরে পড়ানো হয়। এ ছাড়া স্নাতকোত্তর (প্রিলিমিনারি) কোর্সও চালু রয়েছে।

কয়েকজন শিক্ষক বললেন, কলেজের বড় সমস্যা পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব। এখন প্রতি বিষয়ে চার থেকে ছয়টি করে পদ রয়েছে। বাংলা ও ইংরেজি দুটি বিভাগেই মাত্র তিনজন করে নিয়মিত শিক্ষক রয়েছেন।

বাংলা বিষয়ের বিভাগীয় প্রধান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, এই বিভাগে শিক্ষকের পদ থাকার কথা কমপক্ষে ১২টি। কিন্তু অনুমোদিত ছয়টি পদের মধ্যে মাত্র তিনজন শিক্ষক আছেন। এ ছাড়া একজন অতিথি শিক্ষক রয়েছেন। ফলে উচ্চমাধ্যমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থীর ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হয়।

শিক্ষক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, কলেজে শিক্ষার্থী ও বিভাগ বাড়লেও সে অনুযায়ী শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হয়নি।

>

ফেনী সরকারি কলেজে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ৩১৭
শ্রেণি কার্যক্রম চালাতে ১০ জন অতিথি শিক্ষক নেওয়া হয়েছে

কলেজের পড়াশোনার মান নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও প্রতিক্রিয়া আছে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এরশাদ উল্যাহ ও স্নাতকোত্তরের গণিতের ছাত্র মো. ইব্রাহিম জানান, এই কলেজে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণিতে কিছু ক্লাস হলেও স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে ঠিকমতো ক্লাস হয় না।

শ্রেণিকক্ষ, গ্রন্থাগার ও আবাসনসংকট

উচ্চমাধ্যমিকের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, কলেজে শ্রেণিকক্ষগুলোতে স্থান সংকুলান হয় না। শ্রেণিকক্ষ–সংকটের কারণে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হয় বলে জানালেন শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মোহাম্মদ জহির উদ্দিন। তিনি বলেন, জরুরি ভিত্তিতে একটি নতুন বিজ্ঞান ভবন প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানালেন, কলেজের বিভিন্ন বিভাগে ১৮টি শ্রেণিকক্ষে মাল্টিমিডিয়া ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলেও অনেক সময়ই কিছু যন্ত্রাংশ নষ্ট থাকে। ফলে পেছনের দিকে বসা শিক্ষার্থীরা শুনতে পায় না। কলেজের পুরোনো ভবনের দ্বিতীয় তলায় মূল গ্রন্থাগারের অবস্থাও করুণ। ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে পড়ার উপায় নেই। গ্রন্থাগারের ওপরের ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে ইতিমধ্যে অনেক বই নষ্ট হয়ে গেছে।

অব্যবস্থাপনার কারণে কলেজ থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ১০০ শয্যার ছাত্রাবাসটিতে গড়ে ৫০ জন ছাত্র থাকে। বাকি আসনগুলো খালি পড়ে আছে। কলেজের মূল ক্যাম্পাসের পাশে ছাত্রীদের জন্য ১০০ শয্যার আরও একটি ছাত্রীনিবাস নির্মাণ করা হলেও গ্যাস সংযোগ না থাকায় এটিও চালু করা যাচ্ছে না।

আর কলেজসংলগ্ন ৫০ আসন করে দুটি ছাত্রাবাসের একটি মেরামত করে শিক্ষকেরা থাকেন। আরেকটি পরিত্যক্ত ছাত্রাবাসের একটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যানটিন চালু করা হয়েছে। অন্যদিকে আবার কলেজ থেকে পরিবহনের কোনো সুবিধা নেই।

কয়েকজন শিক্ষার্থী বললেন, শিক্ষার্থীদের জন্য নিজস্ব কোনো খেলার মাঠ নেই। যে মাঠটি ছিল সেখানে অনেক আগেই একাধিক একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। সংস্কারের অভাবে কলেজের পুকুরটিও কচুরিপানায় ভর্তি হয়ে ডোবায় পরিণত হয়েছে।

আগামী পর্ব: সরকারি আজিজুল হক কলেজ