স্নাতকে এক বিষয় স্নাতকোত্তরে আরেক

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে বিবিএ ডিগ্রি নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। বিভাগের সর্বোচ্চ সিজিপিএ অর্জন করে পেয়েছেন ডিনস অ্যাওয়ার্ডও, কিন্তু স্নাতকোত্তরে কোন বিষয় বেছে নেবেন, তা নিয়ে বেশ ভাবনায় পড়তে হয়েছে তাঁকে। শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে স্নাতকোত্তরের জন্য ভর্তি হয়েছেন, কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ক্লাস করার পর পথ বদলে ফেলেন তিনি। এমবিএ করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) থেকে। অথচ মোস্তাফিজুর এখন কাজ করছেন একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়। এখন তিনি মনে করেন, উন্নয়ন অধ্যয়নে স্নাতকোত্তর করলেই হয়তো সেটা পেশাজীবনে কাজে লাগত। 

স্নাতকোত্তরের বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ছাত্রছাত্রীই দ্বিধায় ভোগেন। নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খায় তাঁদের মাথায়—যে বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করলাম, সেটিই কি আমার স্নাতকোত্তরের বিষয় হওয়া উচিত? নাকি পেশাজীবনের জন্য যেটা বেশি জরুরি সেদিকে পা বাড়াব? স্নাতক আর স্নাতকোত্তরে ভিন্ন ভিন্ন বিষয় বেছে নিলে পরে চাকরির ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না তো? 

শিক্ষক ও পেশাজীবীরা মনে করেন, ভেবেচিন্তে, বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

প্রশ্নের উত্তর থাকা চাই

‘স্নাতকে এক বিষয়ে পড়ে আপনি স্নাতকোত্তরে অন্য বিষয় বেছে নিলেন কেন?’ বিষয় পরিবর্তন করলে অবধারিতভাবেই চাকরির সাক্ষাৎকারে আপনাকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। অতএব এর একটা যুক্তিযুক্ত ও গোছানো উত্তর যেন আপনার কাছে থাকে। 

ডেনমার্কভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান বেস্টসেলারের বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মানবসম্পদ প্রধান কর্মকর্তা আকলিমা ইয়াসমিন বলেন, ‘বিষয় পরিবর্তনের পেছনে জোরালো কারণ থাকতে হবে। হুজুগে কিছু করা যাবে না। কেন বিষয় পরিবর্তন করেছেন, কিংবা আপনি কোন বিষয়ে পড়েছেন, সেটা হয়তো চাকরিদাতার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু আপনার আগ্রহের সঙ্গে আপনার দক্ষতার সামঞ্জস্য আছে কি না, সেটা নিশ্চয়ই তিনি বুঝতে চেষ্টা করবেন। চাকরিদাতার কাছে যদি মনে হয়, নিজের লক্ষ্য কিংবা যোগ্যতা সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা নেই, তিনি হয়তো আপনার ওপর আস্থা রাখতে পারবেন না। তাই সব দিক ভেবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ 

বিবিএতে অনেকে মানবসম্পদ বিষয়ে পড়ে পরবর্তী সময়ে আইন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন। মানবসম্পদের সঙ্গে করপোরেট আইন, শ্রম আইনসহ বিভিন্ন বিষয়কে যুক্ত করা যায়। আবার অনেকে সামাজিক বিজ্ঞান কিংবা কলা অনুষদের বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক করে এমবিএ করেন। ফার্মাসি বা প্রকৌশলের বিভিন্ন বিষয়ে পড়ে দক্ষ ম্যানেজার বা উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য এখন অনেকেই এমবিএ করেন। যা-ই পড়েন না কেন, কী করতে চান, সে সম্পর্কে আপনার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

ভাবতে হবে ভবিষ্যতের কথা

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বেছে নিতে হবে স্নাতকোত্তরের বিষয়। এ ক্ষেত্রে গবেষণার সুযোগ ও পেশার কথা বিবেচনার প্রতি গুরুত্ব দেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষা গবেষক মো. সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কেউ গবেষণা করার জন্য, কেউবা চাকরির জন্য নিজেকে তৈরি করেন। কিন্তু এরপর চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতা খুব প্রবল বলেই শিক্ষার্থীরা দ্বিধায় পড়ে যান। আমি মনে করি, আপনার লক্ষ্য কী, সেটা ভুলে গেলে চলবে না। আপনি কোন কাজে দক্ষ, কোথায় কোথায় আপনার জন্য সুযোগ আছে, ভবিষ্যতে আরও কোথায় কাজের সুযোগ তৈরি হতে পারে—এই তিনের সমন্বয়েই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’ সাদ্দাম হোসেন মনে করেন, কেউ যদি দ্বিধায় ভোগেন, তাহলে স্নাতক শেষেই স্নাতকোত্তর শুরু না করে কয়েক বছর চাকরির অভিজ্ঞতা নিয়ে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

আছে নানা সুযোগ

বর্তমানে দেশের প্রায় সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ আছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন অধ্যয়ন, জাপানিজ স্টাডিজ, অপরাধ বিজ্ঞান, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়ে শিক্ষা অনুষদের বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর করা যায়। 

যেকোনো বিষয়ে স্নাতকে শেষ করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিষয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে স্নাতকোত্তরে যোগ দেওয়ার সুযোগ আছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই সান্ধ্য বা ছুটির দিনে ক্লাসে অংশ নেওয়া যায়। বছরের বিভিন্ন সময় ভর্তির বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্নাতকোত্তর করার সুযোগ আছে। উন্নয়ন অধ্যয়ন, অর্থনীতি, জনস্বাস্থ্য, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য, ব্যবসায়ে প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকোত্তর, এমবিএ বা এক্সিকিউটিভ মাস্টার্স করতে পারেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ও তথ্যকেন্দ্র থেকে মাস্টার্সে ভর্তির নিয়মকানুন ও খরচ সম্পর্কে জানা যাবে।