খাতা দেখতে চাওয়ায় হুমকি: উপাচার্যের কাছে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের দুটি কোর্সের ফলাফলে সন্তুষ্ট হতে না পেরে কোর্স শিক্ষকের কাছে খাতা দেখতে চেয়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষার্থী। কিন্তু খাতা না দেখিয়ে সেই শিক্ষক উল্টো শিক্ষার্থীদের হুমকি দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিভাগীয় প্রধান বরাবর একাধিক লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার না পেয়ে এবার উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে করণীয় জানতে চেয়ে উপাচার্যকে চিঠি দিয়েছেন বিভাগীয় প্রধানও।

২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ‘পিএচটি ৬০২’ ও ‘পিইচটি ৬০৬’ কোর্সের দ্বিতীয় ইনকোর্স পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে এই ঘটনা ঘটে।

লিখিত অভিযোগে শিক্ষার্থীরা বলেছেন, ফল আশানুরূপ না হওয়ায় তাঁরা কোর্স শিক্ষক অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফের কাছে খাতা দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অধ্যাপক রউফ তাতে সম্মত হননি। উল্টো তাঁদের হুমকি দিয়েছেন। দুটি কোর্সের অসামঞ্জস্যপূর্ণ নম্বরের জন্য তাঁদের চূড়ান্ত ফলাফল হুমকির মুখে পড়েছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ নয়জন শিক্ষার্থী গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ২২ অক্টোবর পর্যন্ত বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ সাব্বির হায়দার বরাবর চার দফা লিখিত অভিযোগ করেছেন। এর মধ্যে বিভাগীয় চেয়ারম্যান নোটিশের মাধ্যমে অধ্যাপক রউফকে শিক্ষার্থীদের খাতা দেখানোর জন্য তাগাদা দিলেও কোনো প্রতিকার হয়নি। অবশেষে ১৪ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাধানে আসতে না পেরে করণীয় জানতে চেয়ে ১৭ নভেম্বর ফার্মেসি অনুষদের ডিনের মাধ্যমে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে চিঠি দিয়েছেন বিভাগীয় চেয়ারম্যান।

ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে গত ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত বিভাগের সমন্বয় ও উন্নয়ন (সিঅ্যান্ডডি) কমিটির সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেই সভায় বিভাগীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক রউফের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। যথাযথভাবেই শিক্ষার্থীদের নম্বর দিয়েছেন বলে দাবি করেন অধ্যাপক রউফ। সভায় উপস্থিত জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের অভিযোগকে যৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন।

সূত্র জানায়, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান বরাবর পাঠানো ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কয়েকজন শিক্ষার্থীর আরেকটি চিঠি নিয়েও ২৩ অক্টোবরের সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভায় আলোচনা হয়। সেই চিঠিতে গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধ্যাপক রউফসহ কয়েকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করা হয়েছে। অধ্যাপক রউফের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এই অভিযোগটিও সত্য বলে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা সভায় মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওষুধপ্রযু্ক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ সাব্বির হায়দার আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বরে অসংগতি দেখা দিলে কী করণীয়, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। আর অধ্যাপক রউফের বিরুদ্ধে কয়েকজন শিক্ষার্থী যে অভিযোগ করেছেন, এ ধরনের ব্যাপার আমাদের বিভাগে নজিরহীন হওয়ায় আগে গৃহীত কোনো পদক্ষেপের উদাহরণও আমাদের কাছে নেই। তাই ২৩ অক্টোবরের সিঅ্যান্ডডি কমিটির সভায় আমি সমস্যাটির সমাধানে সুস্পষ্ট নির্দেশনা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়ার প্রস্তাব করি। সভায় থাকা অধিকাংশ শিক্ষক তাতে সম্মতি দেন। মাননীয় উপাচার্যের মতামত চেয়ে ফার্মেসি অনুষদের ডিনের মাধ্যমে ১৭ নভেম্বর পুরো বিষয়টি সম্পর্কে একটি চিঠি দিয়েছি।’

চেয়ারম্যানের পাঠানো চিঠিটি পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান। ফার্মেসি অনুষদের ডিনকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে একটি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য

তবে যাঁর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ, সেই শিক্ষক আবু সারা শামসুর রউফের সঙ্গে যোগাযোগের একাধিক চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে কল করা হলে প্রতিবারই তিনি কল কেটে দেন।