সেরা কলেজেও পদে পদে সমস্যা

কলেজের ৩টি আবাসিক ছাত্রাবাস ১০ বছর ধরে বন্ধ। শিক্ষার্থীর অনুপাতে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের স্বল্পতা রয়েছে। এই দুই সমস্যার সঙ্গে বছরজুড়ে পরীক্ষার কারণে কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। আবার বিভিন্ন নামে ফি নেওয়া হলেও সেই ফির সুবিধা পান না শিক্ষার্থীরা।

এমন নানা সমস্যা নিয়ে চলছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা তিনে থাকা বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ।

তবে সমস্যার মধ্যেও ফলের দিক দিয়ে কলেজটি আগের চেয়ে ভালো করছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন ৭১৮টি স্নাতক (সম্মান) পাঠদানকারী কলেজের মধ্যে বিভিন্ন সূচকের ভিত্তিতে করা র‍্যাঙ্কিংয়ে সেরা ৩-এ জায়গা করে নিয়েছে এই কলেজ। কলেজের অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলীর দাবি, এই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস প্রায় ২৫০ জন শিক্ষার্থী এবার দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। আর পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পেয়েছেন আরও পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী।

১৯৩৯ সালে এই কলেজের যাত্রা শুরু। সরকারি হয় ১৯৬৮ সালে। কলেজ ক্যাম্পাসের আয়তন ১৬৫ বিঘা। আলাদা ক্যাম্পাসে উচ্চমাধ্যমিকে পাঠদান ছাড়াও ২৩টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান), স্নাতক (পাস), স্নাতকোত্তর পড়ানো হচ্ছে। নতুন করে আরও ১৮ বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালুর সুপারিশ মিলেছে।

স্নাতকে (সম্মান) চার বর্ষ মিলে শিক্ষার্থী ১৭ হাজারের ওপরে। স্নাতকোত্তর স্তরে শিক্ষার্থী চার হাজারের বেশি। আর উচ্চমাধ্যমিকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার।

শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সংকট
কলেজে ১৮৪টি পদের বিপরীতে শিক্ষক আছেন ১৪৪ জন। এর বাইরে সংযুক্তি ও ওএসডি হিসেবে আরও ৩২ জন শিক্ষক রয়েছেন। আশির দশকে করা প্রশাসনিক সংস্কারসংক্রান্ত এনাম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী, যেসব কলেজে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শ্রেণি আছে, সেগুলোতে প্রতি বিভাগে ১২ জন করে শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু এই কলেজে এই সংখ্যা গড়ে ছয়। দুজন করে শিক্ষক দিয়ে চলছে সমাজকর্ম, ফিন্যান্স অ্যান্ড মার্কেটিং ও মার্কেটিং বিভাগ। এ ছাড়া রসায়ন, প্রাণিবিদ্যা ও মনোবিজ্ঞান বিভাগে প্রদর্শকের পদ খালি।

নতুন করে আরও ৯৩ শিক্ষকের পদ চেয়ে কলেজ প্রশাসন আবেদন করলেও তা এখনো হয়নি। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক হলেও এ বিষয়ে শিক্ষকের কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। খণ্ডকালীন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান।

কলেজে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তরের ২৩টি বিভাগে শ্রেণিকক্ষ আছে মাত্র ৪১টি। প্রতিটি বিভাগে প্রয়োজন কমপক্ষে ছয়টি শ্রেণিকক্ষ। কিন্তু আছে এক থেকে দুটি। অন্যদিকে উচ্চমাধ্যমিকে প্রায় ৩ হাজার ৩০০ শিক্ষার্থীর জন্য শ্রেণিকক্ষ রয়েছে মাত্র ১০টি।

আবাসন-সংকট
শহীদ তিতুমীর হলে ৮০, শহীদ আকতার আলী মুন হলে ৯৬, শেরেবাংলা হলে ৪০ এবং ফকরুদ্দিন আহম্মেদ হলে ৯৬ জন শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা 

রয়েছে। কিন্তু তিতুমীর ছাত্রাবাস, আকতার আলী মুন ছাত্রাবাস ও শেরেবাংলা ছাত্রাবাস ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবিরের সংঘর্ষের পর কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। ৪৪ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে আখতার আলী মুন হলের সংস্কারকাজ হলেও খুলে দেওয়ার উদ্যোগ নেই।

একমাত্র ছাত্রী হল বেগম রোকেয়া ছাত্রী নিবাসে আসন ৩০০ হলেও গাদাগাদি করে থাকছেন প্রায় ৬০০ ছাত্রী। আবার হলটির অবকাঠামোগত সমস্যাও আছে।

অবশ্য অধ্যক্ষ শাহজাহান আলী বলেন, রোকেয়া হল সংস্কারের জন্য শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। অচিরেই সংস্কারকাজ হবে। এ ছাড়া মেয়েদের নতুন আরেকটি হল আগামী বছরের মধ্যে চালু করা সম্ভব হবে।

ফি দেন, সুবিধা মেলে না
কলেজের একেকজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে প্রতিবছর ১৫০ টাকা করে উন্নয়ন ফি আদায় করা হয়। কলেজে শিক্ষার্থী প্রায় ৩০ হাজার। এই হিসাবে বছরে উন্নয়ন ফি আদায় হওয়ার কথা প্রায় ৪৫ লাখ টাকা। কিন্তু গত দুই বছরে চোখে পড়ার মতো দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন দেখেননি শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে ২২৫ টাকার বাসভাড়া বৃদ্ধি করে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে কলেজে কোনো বাস কেনা হয়নি। বাস আছে ছয়টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। আবার শিক্ষার্থীপ্রতি ৩০ টাকা হারে ম্যাগাজিন ফি আদায় করা হলেও কলেজে ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় না। চিকিৎসা ভাতা তহবিলে প্রতিবছর শিক্ষার্থীপ্রতি ২০ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু নেই চিকিৎসাকেন্দ্র ও ওষুধপত্র। তবে খণ্ডকালীন একজন চিকিৎসক আছেন।

২০১৬ সালে প্রথম আলো এই কলেজ নিয়ে যখন প্রতিবেদন করে, তখনো ফি নিয়ে এই সমস্যাগুলো ছিল।

অবশ্য অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলীর দাবি, শিক্ষার্থীর কাছ থেকে তোলা উন্নয়ন ফি দিয়ে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০০ জোড়া বেঞ্চ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া কলেজের বেশ কিছু উন্নয়ন করা হয়েছে। অবশিষ্ট টাকা কলেজ তহবিলে জমা আছে। আর গাড়ির ফিটনেস, নিবন্ধন, রং করা, স্টাফদের বেতনসহ নানা খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় বাসভাড়া বৃদ্ধি করতে হয়েছে।
আগামী পর্ব: সিলেটের এমসি কলেজ