জাবিতে উপাচার্যকে অপসারণ ও হল খোলার দাবিতে বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্যকে অপসারণ, আবাসিক হল খুলে শিক্ষা কার্যক্রম চালুসহ তিন দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন আন্দোলনকারীরা।

আজ বুধবার বেলা একটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলাভবন–সংলগ্ন মুরাদ চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি কয়েকটি সড়ক ও পুরোনো প্রশাসনিক ভবন ঘুরে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।

সমাবেশ শেষে আবার একটি মিছিল বের হয়ে মুরাদ চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল–পরবর্তী সমাবেশে একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইনের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয়।

আন্দোলনকারীদের তিন দফা দাবি হলো, ৫ নভেম্বর উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার বিচার, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিল ও উপাচার্যকে অপসারণ।

উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগরের মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘চার মাস হতে চলল শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে, হল ভ্যাকেন্ট করে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের জানা উচিত, কোনোভাবেই এ আন্দোলন দমন করা যাবে না। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ এ সময় আগামী ৩ ডিসেম্বর উপাচার্যের দুর্নীতির খতিয়ান পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করার ঘোষণা দেন তিনি।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুস্মিতা মরিয়ম বলেন, ‘সারা দেশ জানে, জাহাঙ্গীরনগরে দুর্নীতি হয়েছে। যারা টাকা পেয়েছে, তারাও টাকা পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে। উপাচার্য যদি দুর্নীতি না করে থাকেন, তাহলে সারা দেশের মানুষের সামনে সেটা প্রমাণ করুন।’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মুশফিক-উস-সালেহীন বলেন, ‘ফারজানা ইসলামের প্রহসন দেখতে দেখতে পুরো ক্যাম্পাস এবং বাংলাদেশ বিরক্ত। উপাচার্য এর আগেও আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের একটি অংশকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। আর এখন ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহাথির মুহাম্মদ বলেন, ‘আমরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছিলাম। কিন্তু অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের মদদে আন্দোলনকারী শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করা হয়েছে। এ হামলার পরে তিনি একমুহূর্তের জন্য উপাচার্য পদে থাকতে পারেন না। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভয় পেয়ে হল ভ্যাকেন্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রেখেছেন। তাঁর অপসারণের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত হতে পারে।’

সমাবেশে ২০১০ সালে ২৭ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবৃত্তি সংগঠন ‘ধ্বনি’র কক্ষে আগুন দেওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে সংগঠনটির সাবেক সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবাদী কর্মসূচি পালন করার কারণে রাতের আঁধারে ধ্বনির কক্ষে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছিল। তখনকার প্রশাসন বলেছিল, তিন দিনের মধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। কিন্তু আজও সেটা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে উপাচার্যের ‘মধ্যস্থতায়’ ছাত্রলীগকে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা দেওয়ার অভিযোগের তদন্তের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গত ২৩ আগস্ট শুরু হওয়া এ আন্দোলন ১৮ সেপ্টেম্বর উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলনে রূপ নেয়। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করায় গত ২ অক্টোবর থেকে আন্দোলন মোড় নেয় উপাচার্যকে অপসারণের দাবিতে। ১০ দিন উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ রাখার পর ৪ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। পরদিন ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা তাঁদের পিটিয়ে সরিয়ে দেন। সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও আন্দোলন অব্যাহত রাখেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৩ নভেম্বর হল খোলার আল্টিমেটাম দিয়ে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত আন্দোলনে বিরতি দেন তাঁরা। এরপরও ক্যাম্পাস না খোলায় আবার আন্দোলন শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা।