গরহাজির এক উপাচার্য

নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ক্যাম্পাসে প্রায়ই অনুপস্থিত থাকেন বলে অভিযোগ আছে। এ কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে বলে ছাত্র-শিক্ষকদের অভিযোগ। সেই অভিযোগ পৌঁছেছে তথ্য কমিশনে। গতকাল সোমবার বিষয়টি নিয়ে কমিশনে শুনানির কথা থাকলেও তা পিছিয়েছে।

উপাচার্যের ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতি নিয়ে রংপুরে স্থানীয়দের মধ্যেও আলোচনা-সমালোচনা আছে। সম্প্রতি তথ্য অধিকার আইনে রংপুরের একটি কলেজের অধ্যক্ষ কে এ এইচ ফখরুল আনাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে জানতে চান, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে উপাচার্য কত দিন ছুটি ভোগ করেছেন। জবাব না পেয়ে তিনি অভিযোগ করেন তথ্য কমিশনে। ফখরুল আনাম ছুটির নীতিমালা ও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি ফি বাবদ কত আয় হয়েছে এবং কোন খাতে কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেই তথ্যও জানতে চেয়েছেন।

ফখরুল আনাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে জানানো হয়, উপাচার্য রাষ্ট্রপতি বা আচার্যের কাছে দায়বদ্ধ। ছুটির তথ্য জানানোর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারের বাইরে। অন্য দুটি বিষয়ে আংশিক তথ্য জানানো হয়। পরে তিনি তথ্য কমিশনে অভিযোগ করেন।

গতকাল শুনানি ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময় নিয়েছে। আর তথ্য কমিশন ফখরুল আনামকে জানিয়েছে, উপাচার্যের ছুটির তথ্য চেয়ে তাঁর আবেদন আমলে নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, তথ্য কমিশন শুনানি ছাড়া অভিযোগ খারিজ করে দেওয়ায় তিনি সন্তুষ্ট নন। ১৮ ডিসেম্বর তথ্য কমিশনে আবার শুনানি হওয়ার কথা।

>

নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর অনুপস্থিতি নিয়ে ছাত্র-শিক্ষকদের অভিযোগ তো আছেই। এখন অভিযোগ গেছে তথ্য কমিশনে।

গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও উপাচার্য ক্যাম্পাসে ছিলেন না। গত ২৭ নভেম্বর সর্বশেষ তিনি ক্যাম্পাসে ছিলেন। অবশ্য উপাচার্যের একান্ত সচিব আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, রোববার ঢাকায় সিন্ডিকেটের সভা থাকায় উপাচার্য সেখানে ছিলেন।

ক্যাম্পাসে অনুপস্থিতির বিষয়ে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি যখন ঢাকায় অবস্থান করেন তখন ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লিয়াজোঁ অফিসে সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ করেন। যাঁরা তাঁর এই অনুপস্থিতির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তাঁদের অভিযোগ অযৌক্তিক। তিনি দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ভালোভাবেই চলছে।

এদিকে গত ২০ নভেম্বর উপাচার্যকে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির স্মারকলিপিতে বলা হয়, তিনি ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে অনুপস্থিত থাকায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। গত ৬ অক্টোবর শিক্ষক সমিতির সভায়ও উপাচার্যের অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওনার দীর্ঘ সময় ধরে অনুপস্থিতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়েছে।’ শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি তুহিন ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে উপাচার্য থাকেন না বললেই চলে। এটা তাঁর নিয়োগের শর্ত লঙ্ঘন।