প্রাপ্তির আয়নায় চুয়েট

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা। সোমবার রাতে।  ছবি: প্রথম আলো
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ সমাবর্তন উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আলোকসজ্জা। সোমবার রাতে। ছবি: প্রথম আলো

ভবন থেকে গাছপালা—সবখানেই আলোর রোশনাই। কোথাও জ্বলছে লাল বাতি, কোথাও বা সাদা-নীল। লেকের পানিতেও আলোর নাচন। সেখানে বসানো হয়েছে ফোয়ারা। সবখানেই উৎসবের আমেজ। যেন নবরূপে সেজে উঠেছে সবুজ প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন ও সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব ঘিরেই এত আয়োজন।

১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পা রেখেছে ৫২ বছরে। এই মাইলফলক স্মরণীয় রাখতে এ বছর সমাবর্তন ও সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে পাশাপাশি দুটি দিনে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সমাবর্তন এবং পরদিন শুক্রবার বসবে সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের আয়োজন। এ উপলক্ষে কয়েক দিন আগে থেকেই বর্ণিল রূপে সাজানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস।

৫১ বছর আগে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল তিনটি বিভাগ এবং ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিচিত। সবুজ স্বর্গখ্যাত ১৭১ একরের এই বিদ্যাপীঠের ঝুলিতে এ বছরগুলোতে যুক্ত হয়েছে নানা অর্জন আর সাফল্যের গল্প। কাপ্তাই হ্রদ ও কর্ণফুলীর তীরবর্তী সমভূমি হওয়ার সুবাদে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পুরোটাই আছড়ে পড়েছে এই ক্যাম্পাসে।

যত অর্জন

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোবটিকস চর্চায় হরহামেশাই দেশ–বিদেশ থেকে নিয়ে আসছেন পুরস্কার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রিনি ঈশান ও মাঈনুল হাসানদের রোবট দেশ–বিদেশে নন্দিত হয়েছে। রোবটিকসের পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন এখানকার শিক্ষার্থীরা। ২০১৭ সালের সারা দেশের মেয়েদের জাতীয় পর্যায়ের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় কম্পিউটার কৌশল বিভাগের জান্নাতুল ফেরদৌস ও সুমাইয়া বিনতে হেদায়েতের দল ‘চুয়েট ডায়মন্ড অ্যান্ড রাস্ট’ দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। ২০১৯ সালের জাতীয় প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায়ও চুয়েটের মেয়েরা দ্বিতীয় রানার্সআপ হয়েছেন।

এ ছাড়া ফেসবুক, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যোগ দিচ্ছেন নিয়মিত। সম্প্রতি কম্পিউটার কৌশল বিভাগের ‘১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ইয়ামিন ইকবাল গুগলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এর আগে কম্পিউটার কৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ মোহাম্মদ ফাইজুর রহমান মাইক্রোসফট ঘুরে বর্তমানে গুগলে গিয়ে থিতু হয়েছিলেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে একই বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আলী আহমেদ আশিক যোগ দেন।

পিছিয়ে নেই শিক্ষকেরাও। ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি রোধ ও ভূমিকম্প প্রতিরোধী ভবন তৈরি এবং জাতীয় স্থাপনা নির্মাণকালে মাটির গুণাগুণ (সয়েল টেস্ট) নিরীক্ষার জন্য চুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ার এবং নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনাবিদেরা এখন নির্ভরতার প্রতীক। চট্টগ্রাম শহরের তাপ অসুরক্ষিত এলাকা নির্ধারণ, চট্টগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ভূমিকম্পের ভয়াবহতা মূল্যায়নসহ নানা ক্ষেত্রে তাঁরা সাফল্য দেখিয়েছেন। গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের প্রধান দুই নদী হালদা ও কর্ণফুলী নদী নিয়েও।

এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান সাধনার স্বার্থে প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে নানা স্থাপনা। সেই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের শেষ দিকে চুয়েট ক্যাম্পাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ একর জমির ওপর ১০ তলা ভবনবিশিষ্ট বহুলপ্রতীক্ষিত ‘শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর’ স্থাপন প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসের মধ্যে এটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

চুয়েটকে দেশের অনন্য বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ বছর পার হলেও অবকাঠামো ও একাডেমিক দিক থেকে যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হয়নি। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে চুয়েটকে একাডেমিক এবং অবকাঠামো দিক থেকে “সেন্টার অব এক্সিলেন্স”–এ রূপান্তর করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।’