'পুরানো সেই দিনের কথা' গাওয়ার দিনে

শিক্ষা সমাপনী দিবস কেন্দ্র করে রঙে রঙিন হয়েছিল পুরো ক্যাম্পাস। ছবি: হাসান মাহমুদ
শিক্ষা সমাপনী দিবস কেন্দ্র করে রঙে রঙিন হয়েছিল পুরো ক্যাম্পাস। ছবি: হাসান মাহমুদ

চারদিকে উৎসবের আমেজ। সবার মধ্যেই বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা। ক্যাম্পাস সেজেছে নতুন সাজে। পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) সপ্তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সমাপনী দিবসকে (র​্যাগ ডে) ঘিরে এ আয়োজন। গত ২৬ ও ২৭ নভেম্বর পুরো ক্যাম্পাস রঙিন হয়ে উঠেছিল র​্যাগ ডের রঙিন আবিরে।

উৎসবের প্রথম দিন সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ভিড় জমাতে শুরু করেন। দশটায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয় দুইদিনের কর্মসূচি। শোভাযাত্রাটি স্বাধীনতা চত্বর থেকে বের হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। এরপরে সহ-উপাচার্যের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে কেক কাটা হয়।

যত সময় যায়, ক্যাম্পাস রঙিন হয় আরও। এদিন বিদায়ী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন সাদা টি-শার্ট পরে। তাতে লেখা ‘প্রত্যাশিত প্রাঙ্গণ, প্রস্ফুটিত সপ্তম’। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই লেখাটুকু হারিয়ে যায় সহপাঠীদের আঁকিবুঁকির ভিড়ে। এক বন্ধু আরেক বন্ধুর টি–শার্টে লিখে-এঁকে দেন স্মৃতিচিহ্ন। যে কথাগুলো কখনো বলা হয়নি, যাওয়র সময় সেগুলোই হয়তো উঠে আসে মার্কারের কালিতে।

বেলা এগারোটা থেকে একটা পর্যন্ত পুরো ক্যাম্পাস মেতে ওঠে রঙের খেলায়। এরপরই কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অনুষ্ঠিত হয় ফ্ল্যাশমব। হই–হুল্লোড়, আনন্দে বিদায়ী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও। বিকেল চারটায় শিক্ষক-ছাত্র একসঙ্গে ‘শিক্ষকদের সেকাল নয়, শিক্ষার্থীদের একালই সেরা’ শিরোনামের একটি রম্য বিতর্কে অংশ নেন। এরপর সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু করে রাত এগারোটা পর্যন্ত চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। নাচ, গান, আবৃত্তি, পুঁথিপাঠ ও র​্যাম্প শো-এর মাধ্যমে উপস্থিত দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এদিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল গানের দল ‘স্কেচ’।

দ্বিতীয় দিন সকাল নয়টা থেকে শুরু হয় ছবি তোলার উৎসব। এদিন ছেলেদের পরনে ছিল নীল পাঞ্জাবি আর মেয়েরা এসেছিলেন হলুদ শাড়ি পরে।

ছবি তোলা শেষে শুরু হয় স্মৃতিচারণা। ‘নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অনেক না পাওয়া ছিল। এরই মধ্যে কেটে গেল চারটি বছর। তবুও প্রাপ্তির পাল্লা বেশ ভারী’, এভাবেই স্মৃতিচারণা করেন সিএসই বিভাগের এক শিক্ষার্থী। একই বিভাগের শিক্ষার্থী সৌরভ মল্লিক বলেন, ‘আড্ডা, ক্লাস, অ্যাসাইনমেন্ট আর পরীক্ষা নিয়ে ছোটাছুটি করতে করতে কখন যেন জীবনের সবচেয়ে সেরা সময় কেটে গেল। সময়গুলো তো আর কখনো ফিরে পাব না, স্মৃতিটা যত্নে থাকবে।’

এরই মধ্যে কথা হলো বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে তাঁদের অনেক স্বপ্ন। এই শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, বিশ্ববিদ্যালয়টি একদিন পূর্ণাঙ্গ সুযোগ-সুবিধা নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। নতুন প্রজন্ম জ্ঞানের আলোয় আলোকিত হবে।

স্মৃতিচারণার শেষাংশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রীতম কুমার দাস বলেন, ‘শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া মানে দায়িত্ব বেড়ে যাওয়া। ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তুমি যেখানেই থাকো, যে অবস্থাতেই থাকো, পরিবার ও দেশের প্রতি দায়িত্বের কথা ভুলে যেও না’। এরপরে শুরু হয় মেহেদি উৎসব। উৎসবের সঙ্গে চলে প্রিয় মুহূর্তগুলো ক্যামেরার ফ্রেমে ধারণ করে রাখার প্রতিযোগিতা।

প্রথম দিনের মতো দ্বিতীয় দিনেও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়। এদিন গান পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া গানের দল ‘কাব্য’ ও ‘ডিসটিউন’। এদিনের অন্যতম আকর্ষণ ছিল জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘অ্যাভোয়েডরাফা’।

সবশেষে র​্যাগ ডে উপলক্ষে আয়োজিত ফুটবল টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণের মাধ্যমে শেষ হয় দুইদিনের এই জমজমাট উৎসব।