রাঙিয়ে দাও

ক্যাম্পাসকে রাঙাতে কাজ করে আইইউবির আর্ট ক্লাব। ছবি: সংগৃহীত
ক্যাম্পাসকে রাঙাতে কাজ করে আইইউবির আর্ট ক্লাব। ছবি: সংগৃহীত

এক বিকেলে ঢাকার ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশের (আইইউবি) সোশ্যাল সায়েন্স ও লিবারেল আর্টস বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, এক কোণে গোল হয়ে বসে আলোচনায় ব্যস্ত একদল শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে একজন সাদা বোর্ডে কী যেন ছক আঁকছেন। কাছে গিয়ে জানা যায়, আর্ট ক্লাবের ‘আর্টিস্ট মিট’ চলছে। যেকোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয় রাঙিয়ে তোলার দায়িত্ব পড়ে এই ক্লাবের সদস্যদের ওপর। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কয়েক বছর পরই যাত্রা শুরু করেছিল আর্ট ক্লাব। কিন্তু নানা কারণে ক্লাবের কার্যক্রম থমকে ছিল বেশ কয়েক বছর। কয়েকজন শিক্ষার্থী উদ্যোগী হয়ে ২০১৭ সালে আবার যখন আর্ট ক্লাবে প্রাণ সঞ্চার করেন, তখন সদস্যসংখ্যা ছিল মাত্র ১২ জন। এখন সেই ক্লাবে নিবন্ধিত সদস্যসংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। ভালো কিছু করার তাগিদ থেকে আইইউবির শিক্ষার্থীদের ক্লাবগুলোর মধ্যে এক ধরনের ইতিবাচক প্রতিযোগিতা আছে। কিন্তু আর্ট ক্লাবের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল অন্য ক্লাবগুলোই। বর্তমানে ক্লাবটির সুনাম বিশ্ববিদ্যালয় আঙিনায় সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে সীমানার বাইরেও। নারী দিবসে জাতিসংঘের আয়োজনে ‘হি ফর শি’ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন আর্ট ক্লাবের সদস্যরা। দুর্দান্ত আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের তাক লাগিয়ে দেন তাঁরা। 

সংগঠনটির সভাপতি রুহুল ইফতেখার বলেন, ‘আমাদের আইইউবিতে ছড়িয়ে থাকা সব মেধাকে একবিন্দুতে নিয়ে আসাই আর্ট ক্লাবের লক্ষ্য। ক্লাস একঘেয়ে লাগলে যাঁরা লেকচার শিটে কার্টুন আঁকেন, তাঁরাও কোনো অংশে কম নন। “আর্ট” মানে শুধু ক্যানভাস আর রং-তুলিতে সীমাবদ্ধ থাকা নয়।’ কারও আঁকা ছবি যদি একদম ‘কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং’ হয়, তাঁরও এই ক্লাবে যোগ দেওয়ার সুযোগ আছে? প্রশ্ন শুনে রুহুল হাসেন। বলেন, ‘ছবি আঁকা জানতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমরা গুরুত্ব দিই কিছু একটা করতে চাওয়ার মানসিকতাকে। ক্লাব পরিচালনায় অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়। যাঁর যে বিষয়ে দক্ষতা আছে, তাঁকে সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়।’ বোঝা গেল, ভবিষ্যতের পেশাজীবনে নেতৃত্ব বা ব্যবস্থাপনার চর্চা ক্যাম্পাসেই করার সুযোগ পাচ্ছেন এই ক্লাবের সদস্যরা। 

কম্পোজিশন, অরিগ্যামি, কালার কোডিং, ইলাস্ট্রেটরের ওপর সদস্যদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের আয়োজন করে আইইউবির আর্ট ক্লাব। ভবিষ্যতে দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পী ও কার্টুনিস্টদেরও মেন্টর হিসেবে নিয়ে আসার পরিকল্পনা আছে তাঁদের। 

 ‘দশের লাঠি একের বোঝা’ প্রবাদটি যেন মনে গেঁথে নিয়েছেন ক্লাবের সদস্যরা। এক সদস্য, বিবিএর শিক্ষার্থী জুনায়েদ অনিন্দ্য জানালেন, নিজেদের মধ্যে ভালো বোঝাপড়া থাকায় কঠিন কাজও তাঁদের কাছে সহজ হয়ে যায়। কোনো এক সদস্য হয়তো কোনো অনুষ্ঠানের থিম ডিজাইন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন, সবাই মিলে তাঁকে সাহায্য করলেই দারুণ একটা কিছু দাঁড়িয়ে যায়। আরেক সদস্য রামিনফার কবির বলছিলেন, ‘পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করছিলাম আমরা। আগের দিন আলপনা আঁকছি, এদিকে আমাদের সেমিস্টার ফাইনালও চলছে। আলপনার প্রথম ধাপের রং শেষ করে পরীক্ষা দিতে যাই, পরীক্ষার পর এসে দেখি, বিকেলের বৃষ্টিতে ধুয়ে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্ন। ক্ষণিকের জন্য নিস্তব্ধ হয়ে পড়লেও আমরা সবাই আবার দ্বিগুণ উদ্যমে কাজ করে আলপনা আঁকাসহ ক্যাম্পাস সাজিয়ে তুলতে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করেছি। এই স্মৃতি আমি কখনো ভুলতে পারব না।’ 

সবার মধ্যে রং ছড়িয়ে দেওয়ার মন্ত্রে বিশ্বাসী ক্লাবের সদস্যরা। সম্প্রতি তাঁরা বিশেষ শিশুদের স্কুল ‘প্রয়াস’–এর শিক্ষার্থীদের মনের রংগুলো ক্যানভাসে নিয়ে আসার উদ্দেশে দিনব্যাপী কর্মশালা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিলেন। ক্লাব সভাপতি জানালেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ আরও করার পরিকল্পনা রয়েছে। 

ইতিমধ্যে ক্লাবের সদস্যদের করা শিল্পকর্ম নিয়ে ছয়টি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে ক্যাম্পাসে। তবে এবার নিজেদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, নতুন বছরের শুরুতে আন্তবিশ্ববিদ্যালয় আর্ট সামিট আয়োজনের পরিকল্পনা করছেন তাঁরা।